দিনভর দলিল ঘাঁটছেন ওঁরা

কি হবে, তা বুঝেছেন ডোমকলের কুপিলা গ্রামের দলিল লেখক কামিরুল ইসলাম। এখন সকাল-সাঁঢ এটাই তাঁর কাজ। এক কথায় বুঝে গিয়েছেন এনআরসির ভয়েই মাজা বাঁকা বৃদ্ধ তাঁর দুয়ারে এসেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডোমকল শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
Share:

ছবি এপি।

লাঠিতে ভর দিয়ে বৃদ্ধ এসেছেন, তখনও ভাল করে ভোর ফোটেনি। কড়া নাড়ছেন গ্রামের দলিল লেখকের বাড়িতে। ঘন্টাখানেক ঠায় বসে তাঁর ছেঁড়া দলিলটা মেলে ধরেছেন দলিল লেখকের সামনে, কাঁপা কাঁপা গলায় বলছেন, ‘‘বাবা ভাল করে এক বার দেখ দেখি, এই দলিলে হবে কিনা।’’

Advertisement

কি হবে, তা বুঝেছেন ডোমকলের কুপিলা গ্রামের দলিল লেখক কামিরুল ইসলাম। এখন সকাল-সাঁঢ এটাই তাঁর কাজ। এক কথায় বুঝে গিয়েছেন এনআরসির ভয়েই মাজা বাঁকা বৃদ্ধ তাঁর দুয়ারে এসেছেন। কামিরুল বলছেন, ‘‘ভোরবেলা থেকেই মানুষ বাড়ির বাইরে এসে বসে থাকছেন, আবার অফিস থেকে যখন ফিরছি সেই বিকেল থেকেই মানুষের লাইন বাড়ির দুয়ারে। খুব খারাপ লাগছে মানুষের মুখ দেখে, অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করছি এনআরসির কোনও ভয় নেই, কিন্তু কে কার কথা শোনে।’’ নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে কেবল কুপিলার কামিরুল নয়, গ্রামের শিক্ষিত মানুষদের রুটিনটা এখন বদলে গিয়েছে। নিজের কাজ সামলে মানুষের জন্যই বাড়তি সময়টা দিতে হচ্ছে তাদের।

ডোমকলের শিক্ষক বাবলু মন্ডল বলছেন, ‘‘সেই সকাল থেকেই মানুষের ভিড় বাড়ির সামনে। কি করে ঘুমোই বলুন, সকাল সকাল উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বসে পড়ছি তাদের কাগজপত্র দেখতে। আর তার পর সে সব সামলে কোনক্রমে স্নান খাওয়া সেরে ইস্কুলে ছুট।’’ আবার স্কুল থেকে ফেরার সময় বাড়ির সামনে হাজির এক দল মানুষ, কোনক্রমে নাকে মুখে খাবার গুঁজে আবারও বসে পড়ছেন তাঁদের কাগজপত্র নিয়ে। এতদিন গ্রাম-গঞ্জে রাজনৈতিক নেতা থেকে পঞ্চায়েতের সদস্যদের বাড়ির সামনে ভিড় থাকলেও সেই বিড়ের অভিমুখ ঘুরে গিয়েছে এলাকার শিক্ষিত মানুষের দিকে।

Advertisement

কেবল বাড়িতে নয়, স্কুলে গিয়েও পড়তে হচ্ছে সেই একই পরিস্থিতির সামনে। রানিনগর এলাকার চর বাসগড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর বলছেন, ‘‘দিন কয়েক ধরে বাড়ি আর স্কুল, কাজ একটাই মানুষের দলিলপত্র দেখা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement