Autism

অটিস্টিক মনের খবর রাখেন কত জন

উৎসবে এদের আনন্দ করাটাও অন্য পাঁচটা শিশুর থেকে স্বাভাবিক ভাবে আলাদা। সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না। তা নিয়ে এদের বাবা-মায়েরাও অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকেন।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

নদিয়া শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

মোটরবাইকে বাবার পিছনে বসে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল বছর সাতেকের শৌর্য। রাস্তা দিয়ে বেলুন হাতে হেঁটে যাচ্ছিল প্রায় তারই বয়সী এক শিশু। বেলুনটা পছন্দ হওয়ায় চলন্ত বাইকের উপরে থেকে আচমকাই বেলুনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। ভারসাম্য রাখতে না পেরে উল্টে যায় বাইকটি। বাবা-ছেলে দু’জনেই ছিটকে পড়ে রাস্তার উপর। সেই শেষ। তার পর থেকে আর শৌর্যকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোনোর সাহস পাননি তার বাবা। পুজোয় বাড়িতেই থাকত শৌর্য।

Advertisement

আসলে ‘অটিজম’ রোগে কখন কী করতে হয় বা হয় না, সেই বোধটা শিশুর মধ্যে তেমন ভাবে তৈরি হয় না। তাই বহির্বিশ্ব তাদের খানিকটা ‘অসামাজিক’ মনে করে। নিজেদের খেয়ালে, নিজেদের জগত থাকে তারা। ফলে পড়াশোনা হোক বা বেড়ানো— গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলা এদের পক্ষে হয়তো সম্ভব হয় না। আর তাতেই বাধে সমস্যা। উৎসবের সামাজিকতায় এরা ব্রাত্য হয়ে পড়ে।

পুজো-উৎসবে এদের আনন্দ করাটাও অন্য পাঁচটা শিশুর থেকে স্বাভাবিক ভাবে আলাদা। সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না। তা নিয়ে এদের বাবা-মায়েরাও অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকেন। ছেলে বা মেয়ে কখন কী করে বসে, অন্যদের তাতে কী প্রতিক্রিয়া হয়, তা নিয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন। কারণ, সব মানুষ একই রকম অনুভূতিশীল না-ও হতে পারেন। তাতে খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারেন তাঁরা। এই সব ভেবে অনেকেই একটু নিজেদের গণ্ডীর মধ্যেই বা ‘কমফোর্ট জোন’-এ পুজোর সময় থাকতে চান। শৌর্যের মতো অনেক শিশু আলো ঝলমল উৎসব উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়।

Advertisement

কৃষ্ণনগর শহরে অটিজিম-এ আক্রান্তদের নিয়ে একটি স্কুল চালান শৈবাল সরকার। তিনি বলেন, “অর্টিস্টিক শিশুরা গান, আলোর খেলা খুব ভালবাসে। ওদেরও একটা সজীব মন আছে। সেই মন অন্যদের মতোই আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠতে চায়। কিন্তু সেই সুযোগ অনেক সময় পায় না। সহানুভূতির পরিবর্তে ওদের দেখে অনেকে বিরক্ত হয়।”

সে দিনের শিশু শৌর্যর এখন ২০ বছর বয়স। উৎসবের দিনে রাস্তায় যখন মানুষের ঢল নামে তখন বাড়িতে অস্থির ভাবে পায়চারি করতে থাকে সে। বাড়ির পাশের পুজো মণ্ডপে যখন ঢাক বাজে তখন তার অস্থিরতা আরও বাড়ে। কারণ, মাইকের গান আর ঢাকের বাজনা তাকে ভীষন টানে। কিন্তু সে সেখানে যেতে পারে না। এতে তার মনে ক্রমশ একটা হতাশা ও তার থেকে আক্রোশ তৈরি হয়। তখন হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে ফেলে সে। চিৎকার করে। সেই হতাশার খবররাখে কত জন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement