ফাইল চিত্র।
ষষ্ঠীর সকালে নবদ্বীপ পোড়মা তলার প্রতিমা দেখতে গিয়ে সকলেরই নজর কাড়ছিল মণ্ডপের একটি ফ্লেক্স। যেখানে লেখা— কোভিড পরিস্থিতির জন্য এই বৎসর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান বন্ধ রাখা হইল।
পোড়ামা তলা দুর্গাপুজো পরিচালন কমিটির এই ঘোষণা অনেককে চমকে দিলেও করোনা আবহে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে দৃষ্টান্ত হিসাবেই দেখছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। একইসঙ্গে এই উদ্যোগে বেশির ভাগ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে পুজো কমিটি।
সংক্রমণের ভয়ে অঞ্জলি বন্ধের নির্দেশ নিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশ যখন মনে মনে অসন্তুষ্ট, তখন নবদ্বীপের একাধিক পুজো কমিটি স্পষ্ট ভাবে অঞ্জলি বন্ধের ঘোষণা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পোড়মাতলা ছাড়াও নবদ্বীপ চারপল্লি দুর্গাপুজো কমিটি তাদের মণ্ডপে যাবতীয় অঞ্জলি বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। একই পথে হেঁটেছে নবদ্বীপের মণিপুর দুর্গাপুজো কমিটিও।
আসলে স্নান সেরে কৃতাঞ্জলিপুটে সচন্দন বিল্বপত্র নিয়ে দুর্গামূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে পুরোহিত মশাইয়ের সঙ্গে বিড়বিড় করে বলা— “নমঃ আয়ুর্দেহী, যশো দেহী, ভাগ্যং ভগবতী দেহী মে। পুত্রাং দেহী, ধনং দেহী সর্বাণ কামাশ্চ দেহী মে...।”
নতুন পোশাকের গন্ধ, ধূপ-ধুনোর ধোঁয়া, নাগালের মধ্যে বিশাল দেবীমূর্তির উজ্জ্বল উপস্থিতি। সব মিলিয়ে মহাষ্টমীর সকাল বড় সম্মোহিনী, অলৌকিক। পবিত্র গন্ধে ভরা এই সকালে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য বছরভর মুখিয়ে থাকে অনেক বাঙালিই। কিন্তু করোনাকালে আদালতের নির্দেশ মেনে মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখতে গিয়ে এবারে সেই অঞ্জলি হাতছাড়া হতে বসেছে।
পোড়ামাতলা পুজো কমিটির সম্পাদক বলাই গোস্বামী বলেন, “আমরা সকলকে বলছি মাইকে মন্ত্র শুনে বাড়ির ঠাকুরের কাছে অঞ্জলি দিন। পরে সেই ফুল সুবিধামতো আমাদের মণ্ডপে রাখা ঝুড়িতে দিয়ে যান। পুরোহিত মায়ের পায়ে দিয়ে দেবেন।”
অন্য দিকে, চারপল্লি দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক অরুণাভ রায় বলেন, “জানি, অনেকেই হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্ত আরও অনেক বড় কষ্টের হাত থেকে পরিজনদের বাঁচাতে এ ছাড়া আমাদের সামনে এর কিছু করার ছিল না। এ বার প্রসাদ বা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দর্শনও হবে না। তবে সবটাই অনলাইনে পাবেন এলাকাবাসী।”
আদালতের নির্দেশে এবারে সব পুজোমণ্ডপ এক একটি কন্টেনমেন্ট জ়োন। দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। মহাষ্টমীর সিঁদুরখেলাও বন্ধ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশমতো। বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে তাই খোঁজ পড়ছে অনলাইন পুজো দর্শনের। ‘হেঁটে নয়, পুজো দেখুন নেটে’ কিংবা ‘এ বার অঞ্জলি অনলাইন’— করোনা সময়ের দুর্গাপুজোর ক্যাচলাইন।
কিন্তু দর্শকশূন্য মণ্ডপ রাখতে গিয়ে অঞ্জলিহীন পুজো ঘিরে ভক্তদের দোনামোনাও নেহাত কম নয়। অনেকে নাকি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না বাঙালির বাৎসরিক এই আবেগের এমন আচমকা বদল। এই আবহে তড়িঘড়ি জেলার বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা অনলাইনে পুজো এবং অঞ্জলির ব্যবস্থা করছেন। যেমন, বেথুয়াডহরির কসমস ক্লাব বড় মাঠে জায়ান্ট স্ক্রিন বসিয়েছে। সেখানে পুজো দেখে পাত্রে অঞ্জলির ফুল দেবেন সকলে। আবার, বেথুয়াডহরি খেলাঘর অনলাইনে পুজো দেখার ব্যবস্থা করেছে। সেখানেই অঞ্জলি দেবেন এলাকার মানুষ।
নবদ্বীপ মণিপুর দুর্গাপুজো কমিটি একসঙ্গে ইউটিউব, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে পুজোর লাইভ স্ট্রিমিং-এর বন্দোবস্ত করছে। আয়োজকদের তরফে মানস সাহা বলেন, “অঞ্জলি দেওয়ার জন্য অনলাইন ছাড়া এ বার আর কিছু ভাবা যাচ্ছে না। তবে আমাদের কাছে ফুল দিলে তা পুরোহিত প্রতিমার পায়ে দিয়ে দেবেন।” জেলার অন্যতম বড় পুজো বাদকুল্লা অনামি ক্লাব ভার্চুয়াল অঞ্জলির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ন্যাশনাল বয়েজ ক্লাব অবশ্য এমন কোনও অঞ্জলি আয়োজন রাখছে না।