agriculture

জল নেই, গরু খাচ্ছে ধানচারা

সাধারণত আষাঢ় মাস পড়লেই বীজতলায় আমন ধানের চারা তৈরি শুরু হয়। মূলত বৃষ্টির উপরেই ভরসা। চারা হাঁটু পর্যন্ত মাথা তুললে শ্রাবণে সেগুলি খেতে রোপণ করে চাষ শুরু হয়।

Advertisement

সাগর হালদার  

তেহট্ট শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:১৮
Share:

বৃষ্টির অভাবে শুকিয়েছে মাঠ। আমনের চারা খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে গরুকে। বুধবার তেহট্টে। নিজস্ব চিত্র

বৃষ্টি ছিঁটেফোঁটা। ধানখেতে জল দিতে পাম্পের খরচ চালানোও দুষ্কর হয়ে উঠছে। জমি তৈরি না করতে পেরে ধানের চারা গরু-ছাগলকে খাইয়ে দিচ্ছেন নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা তেহট্টের চাষিরা। কেউ আবার গরুর খাবারের জন্য বিচালি পেতে অল্প জমিতে ধান চায করছেন।

Advertisement

সাধারণত আষাঢ় মাস পড়লেই বীজতলায় আমন ধানের চারা তৈরি শুরু হয়। মূলত বৃষ্টির উপরেই ভরসা। চারা হাঁটু পর্যন্ত মাথা তুললে শ্রাবণে সেগুলি খেতে রোপণ করে চাষ শুরু হয়। বৃষ্টির জল থইথই খেতে ধানের গোড়া ডুবে থাকে। তবে গাছ বাড়ে। অগ্রহায়ণে ধান পাকে, কাটার মরসুম আসে। শীতে ওই জমিতেই সর্ষে ইত্যাদির চাষ হয়।

কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এ বার সব হিসাব গুলিয়ে গিয়েছে। শ্রাবণ পার হয়ে ভাদ্রের মাঝামাঝি চলে এলেও খেতে জল নেই, প্রায় ফুটিফাটা। এই অবস্থায় লাগানো যাচ্ছে না ধান। তৈরি হওয়া চারা জমিতেই পড়ে রয়েছে।

Advertisement

চাষিরা জানাচ্ছেন, এত দেরিতে ধান লাগালে যতটুকু ফলন পাওয়া যাবে তা তুলতেও পৌষ মাস এসে যাবে। তখন আবার শীতের ফসল চাষ করা যাবে না। তাই ধানের আশা ছেড়ে তাঁরা গরু-ছাগলের পেট ভরানোর ব্যবস্থা করছেন। তেহট্ট, বেতাই, শ্যামনগর, ইলশামারি, আশরাফপুর — এই তল্লাটের প্রায় সর্বত্রই এই একই ছবি। বুধবার নিজের খেতে দাঁড়িয়ে তেহট্টের মানিক বিশ্বাস বলেন, “প্রতি বছর সাড়ে সাত বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। কিন্তু জমির যা ফুটিফাটা দশা, শ্যালো পাম্পের জল দিয়ে চাষ করতে গেলে খরচই তুলতে পারব না। তাই দুই বিঘায় ধান লাগিয়েছি। বাকি চারা গরুকে খাইয়ে দিয়েছি।” বেতাইয়ের অনীল বিশ্বাস বলছেন, “চার বিঘা জমির জন্য চল্লিশ কেজি আমন বীজ কিনে চারা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু এখন আর লাগানো যাবে না। তাই গরু-ছাগলকে খাইয়ে দিচ্ছি।”

নদিয়ার এই এলাকায় প্রচুর পাট চাষ হয়। পাট থেকে রোঁয়া বার করতে গাছ জলে পচাতে হয়, চাষিরা যাকে বলেন ‘পাট জাঁক দেওয়া’। তার জন্যও প্রচুর জল লাগে। অনেক চাষি আছেন যাঁরা পাট আর দুই-ই চাষ করেন। পাট জাঁক দেওয়ার জল জোটাতেই তাঁদের ভাল রকম খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন আর ধানের জন্য বাড়তি খরচ করার সঙ্গতি নেই। দেবনাথপুরের অলকেশ পাল, রমাকান্ত মণ্ডলেরা বলছেন, “পাট জাঁক দেওয়া শেষ হয়নি। প্রচুর বাড়তি খরচ।‌ এর উপর পাম্পে জল তুলে ধানজমি তৈরির বাড়তি খরচ চালানো অসম্ভব। তাই চারা কিছুটা রেখে বেশির ভাগটাই গরু-ছাগলকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে।” তবে কষ্ট করেও কিছু চাষি অর্ধেক জমিতে চাষ শুরু করেছেন। তার জন্য ট্রাক্টর চালিয়ে জমি কাদা করা হচ্ছে। তার জন্য বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে প্রায় হাজার টাকা। এর পর পাম্প দিয়ে দিনে ঘণ্টা দুই জল দিতে হচ্ছে। সেই পাম্পের জন্য দিনে প্রায় ৩০০ টাকা জ্বালানির খরচ লাগছে। শেষে যা ফলন হবে, তাতে দাম উঠবে কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কী করছে কৃষি দফতর?

তেহট্ট ১ সহ কৃষি আধিকারিক আনন্দকুমার মিত্র বলেন, “আমন ধান চাষের জমি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে চাষ করে বা চারা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বাংলা শস্য বিমার জন্য আবেদন করলে রাজ্য সরকার তাঁদের সাহায্য করবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement