থানা থেকে বেরিয়ে আসছেন কাউন্সিলরেরা। নিজস্ব চিত্র
ভেবে নিয়েছিলেন ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান হবেন তিনিই। এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, তলবি সভার পরেই ‘ভাইস চেয়ারম্যান’ লেখা বোর্ড থেকে ‘ভাইস’ শব্দ মুছে ফেলে ‘চেয়ারম্যান’ লেখা বোর্ড টাঙিয়ে গাড়িতে ঘুরছিলেন। এমনকি সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত গত পুরবোর্ডের উপ-পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ চাকি জানতেন তিনিই নতুন পুরপ্রধান হতে চলেছেন। এর পরেই ডোমকলের আইসি’র নির্দেশ মেনে কাউন্সিলরেরা থানায় গিয়েছিলেন। ডোমকল থানায় যাওয়ার পরেই অবস্য যাবতীয় হিসেব বদলে যায়! সেখানেই জানতে পারেন, তিনি নন, নতুন পুরপ্রধান হচ্ছেন জাফিকুল ইসলাম।
ওই ঘটনার পরে কার্যত ভেঙে পড়েছেন পোড় খাওয়া ওই রাজনৈতিক নেতা। পুরপ্রধান হতে না পারার জন্য তিনি অবশ্য দুষছেন পুলিশকেই। প্রদীপ চাকির দাবি, ‘‘এ দিন সকাল ১০টা ১২ মিনিটে দাদার (শুভেন্দু অধিকারীর) সঙ্গে কথা হয়। তখনও জানতাম ডোমকলের পুরপ্রধান হচ্ছি আমি। এর পরে ১১টা ২৫ মিনিটে ডোমকল থানায় ঢুকে প্রথম জানতে পারি নতুন পুরপ্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জাফিকুলকে। আমার খুব খারাপ লেগেছে। এ ধরনের ঘটনা আমার রাজনৈতিক জীবনে আমার সঙ্গে দ্বিতীয় বার ঘটলো।’’
গত কয়েক দিন ধরেই পুরপ্রধান হিসেবে প্রদীপের নাম ডোমকল জুড়ে চাউর হয়ে গিয়েছিল। এমনকি তাঁর গাড়ির সামনে ‘চেয়ারম্যান’ লেখা বোর্ড দেখে ডোমকলের মানুষ প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, উপ-প্রধান এ বার ডোমকলের নতুন পুরপ্রধান হচ্ছেন। এর পিছনে কারণও ছিল। তৃণণূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা যেমন ডেরা করে তাঁর বাড়িতেই ছিলেন, তেমনি দীঘার সমুদ্র সৈকতে কাউন্সিলরদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁরা মস্তিষ্কপ্রসূত।’’ ফলে ঘটনার আচম্বিতে চরম হতাশায় ডুবে গিয়েছেন তিনি। প্রদীপ চাকি বলছেন, ‘‘কী আর করা যাবে! দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে।’’
তবে এত কিছুর পরেও প্রদীপের দপ করে নিভে যাওয়ায় ডোমকল জুড়ে চলছে তুমুল চর্চা।
এখন পুরপ্রধান নিয়োগে পুলিশের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘ডোমকলের পুরপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি গোটাটাই সামলেছেন জেলার পুলিশ কর্তারা। জেলা পুলিশের নির্দেশেই এ দিন বিদায়ী পুরপ্রধান সৌমিক হোসেনের বিপক্ষের কাউন্সিলরদের থানায় ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়—নতুন পুরপ্রধানের নাম। কারণ, বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরাও ‘ঐক্য’ ছিল না। এমনকি পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়েও নিজেদের মধ্যে মতান্তর তৈরি হয়।’’ ফলে এ দিনের সভায় গণ্ডগোলের আশঙ্কাও দেখা দেয়। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘সভাকে ঘিরে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক করতেই কাউন্সিলরদের থানায় ডাকা হয়েছিল।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরপ্রধান হিসেবে অনেক আগেই জাফিকুল ইসলামকে বেছে নিয়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তা সত্ত্বেও ‘পরিকল্পনা’ করেই প্রদীপ চাকরির নাম ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাওয়ায়। ওই কৌশল নেওয়ার পিছনে দলীয় নেতৃত্বের আশঙ্কা ছিল—পুরপ্রধান হিসেবে তাকে বেছে নেওয়া না হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাগড়া দিতেন প্রদীপ। এমনকি সৌমিককে সামনে রেখে নতুন সমাকীরণও তৈরি হতে পারে। সেই সমস্ত রাজনৈতিক কূট-কাচালি বন্ধ করতেই তৃণমূল নেতৃত্বের এই কৌশল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।