রক্তের সঙ্কটে ভুগছে এলাকার মানুষ। প্রতীকী চিত্র।
রক্তের অভাবে মহাসঙ্কটে পড়েছেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রসূতিরা। রক্তশূন্য ব্লাডব্যাঙ্ক। একই অবস্থা ডোমকলের। দু’টি এলাকাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। গড়ে প্রতিদিন জঙ্গিপুর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তিনশোরও বেশি রোগী। ডোমকলে প্রতিদিন প্রায় দেড়শো রোগী ভর্তি হচ্ছেন।তুলনায় এখনও কিছুটা সঙ্কটমুক্ত জেলার অন্যান্য হাসপাতালগুলি। সব হাসপাতালেই ৩০ থেকে ৪০ ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে। বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও প্রায় ২৫০ ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে।মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, “মুর্শিদাবাদে বরাবরই রক্তের চাহিদা থাকে। ১৪০০ থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছে, যারা এখান থেকে নিয়মিত রক্ত নেন। এ ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম রয়েছে, আমাদের হাসপাতাল রয়েছে।’’
জঙ্গিপুরে এমনই অবস্থা যে, মঙ্গলবার রাতে এক প্রসূতির পরিবার দালালদের ফাঁদে পা দিয়েছিল। পরে অবশ্য দুই দালালকে গ্রেফতার করা হয়। জঙ্গিপুর ফাঁড়ি থেকে এক সিভিক কর্মীকে নিয়ে এসে সেই প্রসূতিকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে জঙ্গিপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
একই সঙ্কট ডোমকল মহকুমা হাসপাতালেও। সেখানেও রক্তশূন্য শুক্রবার। এই মুহূর্তে ডোমকলে প্রায় ৩০০ রোগী ভর্তি ।
জঙ্গিপুর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ থেকে ৬০ জন প্রসূতির প্রসব হয়। জেলার মধ্যে রোগীর চাপ সব চেয়ে বেশি এই মহকুমা হাসপাতালে। পাশেই ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম থেকে রেফার হয়ে রোগীরা আসছেন এখানে। এই মুহূর্তে এই হাসপাতালে ভর্তি প্রায় সাড়ে ছ’শো রোগী, যাঁদের দু’শোরও বেশি প্রসূতি। রক্তের অভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন প্রসূতিরাই। কারণ চিকিৎসকদের মতে, এই এলাকায় ১৯ বছরে মা হচ্ছেন প্রসূতিরা, স্রেফ বাল্য বিবাহের কারণে। মুর্শিদাবাদে পঞ্চম পরিবার সমীক্ষা মতো এই সংখ্যা ২০.৬ শতাংশ। বাল্য বিবাহের সংখ্যা ৫৫ শতাংশ। আর তাতেই প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ বাড়ছে, কমছে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। রক্তের জন্য হন্যে হচ্ছেন প্রসূতিদের পরিবার।
বুধবার রঘুনাথগঞ্জ ২ ব্লক অফিসে একটি রক্তদান শিবির ছিল। আশা ছিল ৫০ ইউনিট রক্ত মিলবে, মিলেছে মাত্র ৮ ইউনিট। ফলে নিদারুণ রক্ত সঙ্কটে পড়েছে জঙ্গিপুর। ৬৩২ শয্যার জঙ্গিপুর মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয় গড়ে। কিন্তু সেই তুলনায় জোগান মেলে না।