কেউ বারো কেউ বা পনেরো— জেলা পরিষদের বিভিন্ন বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে ফলাও কারবার সত্ত্বেও দোকানের ভাড়া মেটানোর ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছিলেন না তাঁরা।
এ বার তাই নড়েচড়ে বসল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। বিভিন্ন মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকান ঘরের বকেয়া ভাড়া আদায়ের সময় সীমা বেঁধে দিল তারা। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। তার উপর রয়েছে সুদ। সব মিলিয়ে কোটি টাকার উপরে পাওনা জেলা পরিষদের।
ওই দোকান মালিকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে চলতি মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে পাওনা টাকা জমা না করলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।
মুর্শিদাবাদের পাঁচটি মহকুমায় রয়েছে ২২টি মার্কেট কমপ্লেক্স।পড়ে রয়েছে। বহরমপুর মহকুমা এলাকায় ন’টি মার্কেট কমপ্লেক্সে রয়েছে ৩১২টি দোকান। ভাড়া বাবদ প্রাপ্য ২৬ লক্ষ ৬৯ হাজার ২০৪ টাকা। একই ভাবে, লালবাগ মহকুমা এলাকার পাঁচটি মার্কেট কমপ্লেক্সের ১৮০টি দোকান ঘরের জন্য বকেয়া ৮ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা, ডোমকলের দু’টি মার্কেট কমপ্লেক্সের ৭০টি দোকান ঘরের বকেয়া ১৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ২১৫ টাকা, কান্দির ২২টি দোকান ঘরের বকেয়া ২ লক্ষ ৪৯ হাজার এবং জঙ্গিপুর মহকুমা এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘরের জন্য বকেয়া টাকার পরিমাণ ৮ লক্ষ ৯৩ হাজার ১২০ টাকা।
ওই টাকা বকেয়া পড়ে থাকার জন্য বিগত বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস বোর্ডের গাফিলতিকেই দায়ি করেছে বর্তমান বোর্ড। গত ৩২ বছর বামফ্রন্ট এবং গত ৮ বছর কংগ্রেসের দখলে ছিল মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদ। সম্প্রতি কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সদস্যরা দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় গত ৫ অক্টোবর জেলাপরিষদের ক্ষমতা পায় শাসকদল। তার পরে গত ২৯ ডিসেম্বর অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বিভিন্ন মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকান ঘরগুলির বকেয়া ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তৃণমূলের শাহনাজ বেগম বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের আমলে ওই মার্কেট কমপ্লেক্সগুলি গড়ে তোলা হয়। পরে ওই দোকান ঘর বিলি করা হলে ওই সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।’’ তা হলে ভাড়া দাবি করা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে?
জেলাপরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারী বলেন, ‘‘জেলাপরিষদ ও ব্যবসায়ীর মধ্যে চুক্তি হয়, ৯৯ বছরের। দোকান ঘর বাবদ যে অগ্রিম টাকা নেওয়া হয় তা প্রতি মাসে ভাড়ার সঙ্গে বাদ যাবে বলে লিখিত চুক্তি হয়। ওই সংক্রান্ত ফাইল তৈরি করে সমস্ত তথ্য তাতে নথিবদ্ধ ছিল। এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না কেন বলতে পারব না।’’
তবে দোকান ঘরের দখল রয়েছে ওই ব্যবসায়ীদের কথায়, প্রতি মাসে নিয়ম করে কেউ ভাড়া আদায়ে আসেনি। এমনকী জেলাপরিষদের কোথায় গিয়ে ভাড়া জমা দেওয়া যাবে, তা নিয়েও কোনও স্পষ্ট নির্দেশ ছিল না।
ইসলামপুর মার্কেট কমপ্লেক্সে ৪ নম্বর রুমে স্টেশনারি দোকান করেছেন তরুণ সাহা। ২০০৭সালের জানুয়ারি মাস থেকে তাঁর ভাড়া বকেয়া। ১৬৫বর্গফুট ঘরের মাসে ১৬৫টাকা করে ভাড়া। ১১৭মাসে ১৯হাজার ৩০৫টাকা তাঁর ভাড়া বকেয়া হয়েছে। মাসে সামান্য ভাড়া, তবুও ১০বছর ধরে ভাড়া মেটাননি কেন? তরুণ বলছেন, “আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ। শরীরও ভেঙেছে। চিকিৎসার খরচই মেটাতে পারছি না, ভাড়া!’’
এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে জিয়াগঞ্জ আমাইপাড়া, বহরমপুরের কারবালার মার্কেট কমপ্লেক্স, বড়ঞা মার্কেট কমপ্লেক্স ব্যবসায়িদের নিয়ে জেলাপরিষদ বৈঠক করেছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি ইসলামপুর ও রঘুনাথগঞ্জের মার্কেট কমপ্লেক্সের ব্যবসায়িদের বৈঠকে ডেকেছে জেলাপরিষদ। ওই বৈঠকে বকেয়া ভাড়া মেটানোসহ মার্কেট কমপ্লেক্সের উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হবে।