কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।
মাসখানেক টানাপড়েন চলার পরে পদচ্যুত দেবাংশু রায়কেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে পুনর্বহালের নির্দেশ দিল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। উপাচার্যকে উদ্দেশ করে দেওয়া ওই নির্দেশ শুক্রবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছয়। উপাচার্য ছাড়াও সহ-উপাচার্য ও দেবাংশুবাবুর কাছেও প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশের ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ করা হল তাও উচ্চশিক্ষা দফতরে জানাতে হবে। উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমাকে ভেবে দেখতে হবে কী ভাবে আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা যায়।’’
এ দিন নির্দেশ হাতে আসার পরেই দেবাংশু রায় পুনরায় রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কাগজপত্র উপাচার্যের দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ তবে এ দিন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না। আধিকারিকেরা জানান, সোমবারই হয়তো কার্যকরী রেজিস্ট্রার সুভাষ সরকারের হাত থেকে সব ক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়ে দেবাংশুবাবুকে রেজিস্ট্রারের পদে ফেরানো হবে।
গত ১৭ জানুয়ারি তদানীন্তন রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়কে আচমকা বিশেষ ছুটিতে পাঠিয়ে দিয়ে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক সুভাষ সরকারকে কার্যকরী রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন উপাচার্য। তার জেরে দড়ি টানাটানি শুরু হয়। গত ২০ জানুয়ারি সহ-উপাচার্য গৌতম পাল আবার এক নির্দেশে দেবাংশু রায়কেই রেজিস্ট্রার পদে পুনর্বহাল করেন। তাঁকে টপকে কী করে গৌতমবাবু তা করতে পারেন সেটা জানতে চেয়ে লিখিত কৈফিয়ত চান উপাচার্য। দু’জনের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-আধিকারিকেরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যান। বেশির ভাগ আধিকারিক সরাসরি সহ-উপাচার্যকে সমর্থন করেন। তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-ও উপাচার্যের বিরোধিতায় নামে।
শেষমেশ হস্তক্ষেপ করতে হয় উচ্চশিক্ষা দফতরকে। ৬ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা দফতর এই নির্দেশ দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দেবাংশু রায়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্তের জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বা কোনও কমিটির নির্দেশে তাঁকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়নি। কোনও রকম শৃঙ্খলাভঙ্গের তদন্ত কমিটি গঠন না করে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই তাঁকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ঠিক হয়নি। আচার্য তথা রাজ্যপালের সম্মতিতেই এই নির্দেশ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রত্যাশিত ভাবেই, এই নির্দেশ আসার পরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-বিরোধীরা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন। ওয়েবকুপা-র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজয়কুমার মণ্ডল ও নন্দকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথম থেকে বলে আসছি, রেজিস্ট্রারকে অগণতান্ত্রিক ভাবে সরানো হয়েছিল। সহ-উপাচার্য আইন মেনেই তাঁকে পুনর্বহাল করেছিলেন। এ দিনের নির্দেশে তা স্পষ্ট হয়ে গেল।’’ সহ-উপাচার্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
উপাচার্য বলেন, ‘‘আমি এ দিন একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় ছিলাম। চিঠি পেয়েছি। সোমবার এ নিয়ে ভাবব।’’ তবে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এক আধিকারিক জানান, উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি দল উপাচার্য বা সুভাষ সরকারের কাছ থেকে কোনও নথি সংগ্রহ করেনি। ফলের কিসের ভিত্তিতে তদন্ত হল আর রিপোর্ট তৈরি করে নির্দেশ দেওয়া হল, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘দেবাংশুবাবুর বিরুদ্ধে তৈরি তথ্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট উপাচার্যের হাতে এসেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা-ও বিবেচ্য বিষয়।’’ ফলে উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ এখনই কার্যকর করা হবে কি না তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এত দিন যে কাজ আমি করেছি সবই আইন ও বিধি মেনে। সোমবার আমায় অনেক দিক ভেবে দেখতে হবে, কী ভাবে আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা যায়।’’