নিজস্ব চিত্র
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে গত সপ্তাহে। ফলে মৎস্যজীবীরা ইলিশ-সহ অন্য মাছ ধরার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ছোট ইলিশ বা অন্য ছোট মাছ ধরার ক্ষেত্রে এখনও কোনও বিধিনিষেধ জারি করতে দেখা যায়নি মৎস্য দফতরকে।
বরাবরই ছোট ইলিশ ধরার অভিযোগ ওঠে মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে। এ বারেও মৎস্যজীবীরা মাছ ধরা শুরু করলেও ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে এখনও তাঁদের সচেতনতার কাজ শুরু করেনি মৎস্য দফতর। ইলিশপ্রেমিদের দাবি, ছোট ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও সে ভাবে দফতর মৎস্যজীবীদের সচেতন করা হয় না। ফলে বাজার ছেয়ে যায় ছোট ইলিশে। তাঁরা চান, মরসুমের শুরু থেকেই ছোট ইলিশ বন্ধে উদ্যোগী হোক দফতর।
মুর্শিদাবাদের ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ ফিসারিজ’ জয়ন্ত প্রধান বলছেন, “বরাবরই ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করতে মৎস্যজীবীদের সচেতন করি। এ বছরও ব্লকের মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের এবিষয়ে সচেতন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেই কাজ শুরু হবে।” একই অবস্থা নদিয়াতেও। ওই জেলার ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব ফিসারিজ’ অমলেন্দু বর্মন বলছেন, “শীঘ্রই ভাগীরথী পাড়ে মৎস্যজীবীদের এ বিষয়ে সচেতন করব।”
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী বা সমুদ্রের মৎস্য ভান্ডার ঠিক রাখতে ১৪ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মৎস্যজীবীরা মাছ ধরা শুরু করেছেন। যদিও সমুদ্র বা নদীতে সে ভাবে ইলিশের দেখা পাওয়া যায়নি বলে মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। বর্ষায় মাঝ সমুদ্র থেকে মিষ্টি জলে ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মোহনার দিকে ছুটে আসে। এক সময় মোহনা ছাড়িয়ে সেই ইলিশ ভাগীরথীতে আসত। এখন ভাগীরথীতে ইলিশ কম মেলে। ছোট ইলিশ মাছ ধরাও এর পিছনে একটা বড় কারণ বলে মনে করেন অনেকে।
ইলিশ মাছ ধরা ক্ষেত্রের কী নির্দেশ রয়েছে?
মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৯০ মিলিমিটারের চেয়ে কম ফাঁস যুক্ত জালে ইলিশ ধরা যাবে না। ২৩ সেন্টিমিটার (প্রায় ৯ ইঞ্চির) কম মাপের ইলিশ ধরা, পরিবহণ, কেনাবেচা করা যাবে না। অন্য মাছের ক্ষেত্রের ৪০ মিলিমিটারের কম ফাঁস যুক্ত জাল দিয়ে মাছ ধরা যাবে না। মৎস্য দফতরের এমনই আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রতি বছর ছোট ইলিশ ধরা হয়। বাজার সেই ছোট ইলিশে ছেয়ে যায়। এখন থেকে এ বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে হবে, একই সঙ্গে আইনগত পদক্ষেপ করতে হবে। তবেই ছোট ইলিশ ধরা বন্ধ করা সম্ভব বলছেন ইলিশপ্রেমিরা।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিস্যারম্যান অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলছেন, “সচেতনতার কারণে অবশ্য আগের থেকে ছোট ইলিশ ধরা অনেক কমেছে। এ বছর এখন থেকে আমরা মৎস্যজীবীদের সচেতন করছি।” তাঁর দাবি, “আমরা আন্তরিক ভাবেই চাইছি ইলিশ-সহ অন্য সব ধরনের ছোট মাস ধরা বন্ধ হোক। আর সে জন্য আমরাও মৎস্যজীবীদের নিয়মিত সচেতন করি।”