পূর্ণ গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি, তবু বাঁচল মা ও শিশু

জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের ( জেএনএম) চিকিৎসকদের লাগাতার নজরদারির মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর স্বাভাবিক প্রসব হয় মহিলার। সেই সময় তাঁর প্লেটলেট ছিল মাত্র ৪৯ হাজার। তবে শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক হয়েছে। মা ও শিশু এতদিন হাসপাতালেই চিকিৎসকদের বিশেষ নজরদারি ও চিকিৎসায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share:

সন্তান কোলে। নিজস্ব চিত্র

দশ মাসের পূর্ণগর্ভা মহিলার ডেঙ্গি হয়েছে। প্লেটলেট নামছে হুহু করে। অবস্থা সঙ্কটজনক। অত্যন্ত জটিল কেস। চিকিৎসকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ডেঙ্গি আক্রান্ত প্রসূতি ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুকে বাঁচানো।

Advertisement

জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজের ( জেএনএম) চিকিৎসকদের লাগাতার নজরদারির মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর স্বাভাবিক প্রসব হয় মহিলার। সেই সময় তাঁর প্লেটলেট ছিল মাত্র ৪৯ হাজার। তবে শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক হয়েছে। মা ও শিশু এতদিন হাসপাতালেই চিকিৎসকদের বিশেষ নজরদারি ও চিকিৎসায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গি যাঁদের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার নিতে পারে বা মারণ হতে পারে তাঁরা হলেন বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী, এইচআইভি বা যক্ষ্মা-আক্রান্ত প্রভৃতি। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি আক্রান্তের প্লেটলেট কমলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রবল। মায়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও তা মারাত্মক হতে পারে। জেএনএমের চিকিৎসক সৌগত বর্মন জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের বাসিন্দা চন্দ্রানী দেবী নামে এক মহিলাকে গত ৬ সেপ্টেম্বর ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয়। প্রবল জ্বর ছিল তাঁর। ভর্তির দু’দিনের মাথায় মহিলার প্লেটলেট কমে দাঁড়ায় ২০ হাজার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অত্যন্ত কম। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে। চিকিৎসকেরা মহিলাকে ৪২ ইউনিট প্লেটলেট দেন।

Advertisement

সৌগতবাবু জানিয়েছেন, স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে মোটামুটি ৮০০ গ্রাম রক্তক্ষরণ হয়। অস্ত্রোপচার করলে তা দাঁড়ায় ন্যূনতম ১ লিটারে। ওই মহিলার শরীরে রক্ত অত্যন্ত কমে কমে গিয়েছিল। হাতের কাছে প্লেটলেট ও রক্ত মজুত রেখে ওই মহিলার প্রসব করান চিকিৎসকেরা। ১০ সেপ্টেম্বর প্রসব হয়। চন্দ্রাণীদেবী ও তাঁর স্বামী রাজু হরিজনের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালেও ডাক্তারবাবুরা এমন যত্ন করেছেন ভাবাই যায় না।’’ চিকিৎসকদের মতে, শরীরে রক্ত জমাট বাঁধে মূলত প্লেটলেটের জন্য। প্রসূতিদের শরীরে তা কমে গেলে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের ফলে প্রাণের ঝুঁকি থাকে।

ওই হাসপাতালেরই মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সোমক দাস জানাচ্ছেন, প্রসুতিদের ডেঙ্গি হওয়া মানেই সেটা ‘হাই রিস্ক প্রেগনেন্সি’। কারণ, তাতে মহিলাদের প্রাণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। ডেঙ্গিতে সাধারণ জ্বরের ওষুধ ও স্যালাইন দিতে হয়। অতিরিক্ত ফ্লুইড আবার প্রসূতির হৃদযন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা তো থাকেই। সব মিলিয়ে রোগীকে লাগাতার নজরদারি না-করলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের প্রসবের সময় টিকিৎসকদের হাতে প্রচুর প্লেটলেট ও রক্ত মজুত রাখতে হয়।’’ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অভীক চক্রবর্তীর কথাতেও, ‘‘এই ধরনের রোগীদের মাঝে মধ্যেই রক্ত দেওয়ার দরকার হয়, সব ধরনের ওষুধ দেওয়া যায় না। এবং সবসময় চিকিৎসকের নজরদারিতে রাখতে হয়। বাড়িতে রেখে এঁদের চিকিৎসা করা উচিত নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement