বেলডাঙার হাতি কার্তিক।
দুগ্গা দুগ্গা বলে মিটে গিয়েছে দুর্গা, লক্ষ্মী ও কালী পুজো। পাঁচশো ও এক হাজারের নোটকে অচল ঘোষণার পরে কোনও রকমে সাঙ্গ হয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোও। তাহলে কি শেষমেশ কপাল পুড়বে কার্তিকের?
ক’দিন ধরেই আশঙ্কাটা পাক খাচ্ছিল বেলডাঙা ও পলাশিপাড়ায়। শেষতক প্রতিমা ও মণ্ডপ শিল্পীদের অনেকেই পাঁচশো ও এক হাজার টাকার নোট নেওয়াতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে উদ্যোক্তাদের। পলাশিপাড়ায় বুধবার থেকে শুরু হয়েছে কার্তিক পুজো। আজ, বৃহস্পতিবার বেলডাঙা মেতে উঠবে কার্তিক লড়াইয়ে।
৮ নভেম্বর রাতে ঘোষণা হয় পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল। পুজো উদ্যোক্তাদের মাথায় যেন বাজ পড়ে। সকলেরই এক প্রশ্ন—পুজো হবে কী করে? পরে অবশ্য মুশকিল আসান করে দেন মণ্ডপ ও প্রতিমা শিল্পীরা। পলাশিপাড়া আপনজন সঙ্ঘের কার্তিক পুজো পুরনো পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম। পুজো কমিটির সম্পাদক তারক দাস বৈরাগ্য জানাচ্ছেন, তাঁদের এ বারের বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতিমা ও মণ্ডপ শিল্পীরা পাঁচশো-হাজারের নোট নেওয়াতে তাঁদের সমস্যা হয়নি।
তহবাজার মেন গেটের পুজো উদ্যোক্তা সঞ্জিত মণ্ডলও বলছেন, ‘‘চাঁদা সংগ্রহের সময় একটু সমস্যা হয়েছে। তবে শিল্পীরা ৫০০ ও হাজার টাকার নোট নেওয়াতে জোর বাঁচা বেঁচে গিয়েছি মশাই।’’ নাজিরপুরের মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ সরকারের, পলাশিপাড়ার আলো ও প্যান্ডেলের ব্যবসায়ী সঞ্জিৎ বিশ্বাসদের কথায়, ‘‘পুরনো টাকা না নিলে তো ব্যবসা এ বারে শিকেয় উঠত। ব্যাঙ্কে ওই টাকা জমা দেওয়ার জন্য হাতে বেশ কিছু দিন সময় আছে। সেই ভরসাতেই ওই টাকা নিয়েছি।’’
ফলে নোটের ঝক্কি কাটিয়ে থিম ও আলোকসজ্জায় মেতে উঠেছে পলাশিপাড়ার কার্তিক পুজো। ওই এলাকায় প্রায় চল্লিশটি পুজো হচ্ছে। রবিবার জাঁকজমক করে শোভাযাত্রা বের করে তারপর প্রতিমা বিসর্জন হবে। কার্তিক পুজোতে মেতে উঠেছে থানারপাড়ার ধোড়াদহও।
এ দিকে, আজ, বৃহস্পতিবার বেলডাঙা মেতে উঠবে কার্তিক লড়াইয়ে। লড়াই কেন? উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত তামাম বেলডাঙা ও আশপাশ এলাকার হাজারও মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তার দু’পাশে। মূলত মণ্ডপতলা থেকে ছাপাখানা মোড় পর্যন্ত সবথেকে বেশি ভিড় হয়। কারণ, সেই রাস্তা দিয়েই এলাকার সমস্ত প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোয়। কোন প্রতিমা কত বড়, কারা আগে গিয়ে রাস্তার চৌমাথা দখল করবে, কাদের পুজোর বাদ্যির কত দম, কোন প্রতিমার গলায় সব থেকে দামি মালা, চলে তারই প্রতিযোগিতা। সেটাই আসলে কার্তিক লড়াই।
আর এই লড়াই সামলাতে প্রতি বছর হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় পুরসভা ও প্রশাসনকে। ফলে ক’দিন ধরেই বেলডাঙার প্রাচীন ঐতিহ্য, কার্তিক লড়াই যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় তার জন্য সব রকম ভাবে প্রস্তুত আছে বলে দাবি করেছে প্রশাসন। গত কয়েক বছর ধরে কমবেশি ৩৫০ টিরও বেশি কার্তিক পুজো হয়। দর্শনার্থীর সংখ্যা থাকে লক্ষাধিক। ফলে এই বিপুল ভিড় সামাল দিতে কী করণীয়, সে ব্যাপারে ১০ নভেম্বর পুজো কমিটিগুলোকে নিয়ে প্রশাসন একটি বৈঠকও করে।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের তিনটি মূল পয়েন্টে মঞ্চ ও তাঁবু তৈরি করা হবে। যে পথ দিয়ে প্রতিমা যাবে সেই পথের দু’দিকের নালা কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উঁচু প্রতিমায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত শহরের একটা বড় অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সেই কারণে, শহরের প্রধান গলিপথ ও মূল সড়কে জেনারেটরের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম, অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসকের পাশাপাশি থাকবে পানীয় জলের ব্যবস্থাও।
বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর বলেন, ‘‘প্রতিমার উচ্চতা আগের থেকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সব কথাই বলা হয়েছে। আশা করছি, লড়াই নির্বিঘ্নেই মিটবে।’’ বুধবার থেকেই শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বেলডাঙার ওসি মৃণাল সিংহেরও দাবি, ‘‘আমরাও সবরকম ভাবে প্রস্তুত। কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’