বগুলায় ঘর ঠিক করা চলছে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বাইরে তখন আমপানের দাপট।যে কোনও সময়ে উড়ে যাবে ভাঙা টিনের চাল। ভয়ে ঘরের বাঁশের চটার দেওয়ালের এক কোণে দুই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরেছিলেন সন্ধ্যা রায়। ঝড়ে টিনের চাল হয়তো উড়ে যায়নি কিন্তু ভাঙা টিনের ফাঁক দিয়ে চুপিয়ে পড়া বৃষ্টির জলে ভিজে গিয়েছিল চৌকির উপরের বালিশ-বিছানা সব কিছু।
এখন অবস্থার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। মাথার উপরে চকচকে নতুন টিন। নতুন বাঁশের চটার দেওয়াল থেকে এখনও কাঁচা বাঁশের গন্ধ বের হচ্ছে। মাটির দাওয়ায় নতুন সবুজ বাঁশের খুঁটি ধরে বগুলা কলেজ পাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যাদেবী বলছেন, “বছর দুয়েক আগে মানুষটা মারা যাওয়ার পর থেকে সংসার কোনও মতে টেনে নিয়ে যাচ্ছি। ভাবতেই পারিনি যে, আবার চালে নতুন টিন উঠবে।”
গত কয়েক দিনে বগুলা এলাকার বেশ কয়েক জন পড়ুয়া মিলে কাজ শুরু করেছিল। তারা দেখতে পায় যে এমন বেশ কিছু অসহায় মানুষ আছেন, যাঁদের পাশে থাকার কেউ নেই। ঘরে মাথার উপরেও চালটুকুও জীর্ণ। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ঘর। কোনও কোনও ঘর আবার হেলে পড়েছে এক দিকে। তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, এই সব অসহায় মানুষের নতুন ঘর বানিয়ে দেবে তারা। ৮ মে বংশীনগরে ছিয়াত্তর বছরের নিঃস্ব জগৎতারা বিশ্বাসের ঘর তৈরি করে দেওয়া থেকেই শুরু হয় পড়ুয়াদের এই সামাজিক উদ্যোগ। এরই মধ্যে একে একে এমন নতুন সাতটি ঘর তৈরি করে দিয়েছে তারা।
শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। এখন তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় একশো। সকলেই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। জানা গেল, এক-একটা ঘর তৈরি করতে টিন ও বাঁশ খরচ বাবদ প্রায় দশ থেকে বারো হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এদেরই অন্যতম বি এ প্রথম বর্ষের ছাত্র সৈকত দত্ত, অবন্তিকা রায়রা বলেন, “কাজটা সারা বছর ধরে করে যাব। নিজেরাই টাকা দিচ্ছি। তবে অনেক শিক্ষক ও ব্যবসায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।”