কেবল কথা ১

কেবল কি দামি হচ্ছে? বিভ্রান্ত গ্রাহক

ট্রাইয়ের নির্দেশানুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর রাত বারোটার পর থেকে কেবল টিভি, ডিটিএইচ, আইপিটিভি সহ সব ধরনের টেলিভিশনে সমস্ত পে-চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। এর পর থেকে প্রতিটি গ্রাহক শুধুমাত্র তাঁদের বাছাই করা পে-চ্যানেল দেখতে পাবেন। এ জন্য তাঁকে চ্যানেল-প্রতি নির্দিষ্ট দাম দিতে হবে। পছন্দের চ্যানেল দেখার স্বাধীনতার বদলে কি দিতে হবে বেশি টাকা? বিশদ খোঁজ নিল আনন্দবাজার। ট্রাইয়ের নির্দেশানুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর রাত বারোটার পর থেকে কেবল টিভি, ডিটিএইচ, আইপিটিভি সহ সব ধরনের টেলিভিশনে সমস্ত পে-চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। এর পর থেকে প্রতিটি গ্রাহক শুধুমাত্র তাঁদের বাছাই করা পে-চ্যানেল দেখতে পাবেন। এ জন্য তাঁকে চ্যানেল-প্রতি নির্দিষ্ট দাম দিতে হবে। পছন্দের চ্যানেল দেখার স্বাধীনতার বদলে কি দিতে হবে বেশি টাকা? বিশদ খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

নতুন বছরে নতুন নিয়মকানুনে কেবল টিভি আগের থেকে সস্তা হতে চলেছে নাকি দামি, আপাতত তা নিয়ে বিভ্রান্ত জেলার মানুষ।

Advertisement

অধিকাংশ কেবল অপারেটরেরা দাবি করছেন, নতুন নিয়মে কেবল টিভি দেখার জন্য পকেট থেকে বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে। প্রতিদিন টিভি খুললেই বিভিন্ন চ্যানেলের দৈনিক রেট ফুটে উঠছে। কোনওটি দিনে ৫০ পয়সা আবার কোনওটি ১৯ টাকা। ঘোষণা করা হচ্ছে— প্যাকেজের দিন শেষ। এ বার থেকে একেকটি পে-চ্যানেল দেখার জন্য আলাদা-আলাদা রেট দিতে হবে। তাতে মধ্যবিত্তকে মাসিক বাজেট বাড়াতে হবে। পছন্দের সিরিয়াল, সিনেমা বা নাচ-গানের অনুষ্ঠানের কোনটা তা হলে দেখা যাবে, কোনটা যাবে না, কেনটায় বেশি খরচ হবে কোনটায় কম তা নিয়ে রীতিমতো বিভ্রান্ত অনেক দর্শকই। কী কী পে চ্যানেল তাঁরা বাছবেন সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না।

কেবল অপারেটরেরা অবশ্য দাবি করছেন, মাসে দেড়শো থেকে দু’শো টাকার বিনিময়ে রিমোটের চাবি ঘুরিয়ে কমবেশি তিনশো চ্যানেল দেখার দিন এ বার ফুরোল। এত দিন নদিয়ায় ১৫০-১৬০ টাকার বিনিময়ে এক জন গ্রাহক ১৩০-১৫০ চ্যানেল দেখতে পেতেন। আর একটু দামি প্যাকেজে ১৮০–২০০ টাকার বিনিময়ে তিনশোর উপর চ্যানেল দেখা যেত। তার মধ্যে‌ বহু পে-চ্যানেলও ছিল। নবদ্বীপ কেবল টিভি ব্যবসায়ী সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক কমলকিশোর ঘোষ এবং তরুণকান্তি ঘোষাল জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে কেবলের জন্য প্রতি গ্রাহককে ন্যূনতম ১৫৩.৪০ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে ১৩০ টাকা নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ফি এবং তার উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি বাবদ ২৩.৪০ টাকা। বিনিময়ে তিনি পাবেন শুধু একশোটি ‘ফ্রি টু এয়ার’ চ্যানেল। এর অধিকাংশই এলেবেলে চ্যানেল হিসাবে চিহ্নিত। এর পর তিনি যতগুলি পছন্দের পে চ্যানেল দেখতে চান তার জন্য চ্যানেল-পিছু নির্ধারিত দাম এবং সেই দামের উপর ১৮ শতাংশ হারে জিএসটি দিতে হবে। জনপ্রিয় সিরিয়াল, সিনেমা, খেলা এবং খবরের চ্যানেলগুলির প্রায় সবই পে-চ্যানেল। যার অর্থ, নতুন বছর থেকেই এক জন গ্রাহকের টিভি দেখার খরচ দ্বিগুণ হতে চলেছে। এক কেবল অপারেটরের কথায়, ‘‘৩৫০ বা ৩৭০টাকা প্যাকেজে এত দিন গ্রাহকেরা যত চ্যানেল পেতেন এখন সেটা পেতে তাঁদের প্রায় ৫০০ টাকা খরচা হয়ে যাবে।’’

Advertisement

নদিয়া জেলা কেবল ফোরামের অন্যতম আহ্বায়ক প্রভাত মণ্ডল, প্রণবেশ্বর পোদ্দারদের আশঙ্কা, নতুন এই পদ্ধতিতে কেবল অপারেটর এবং গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহক-অসন্তোষের মুখে পড়তে হবে অপারেটরদের। অনেকে কেবল ছেড়েও দেবেন। প্রভাতবাবু বলেন, “১৫৩.৪০ টাকা বাধ্যতামূলকভাবে দিয়ে বাকি প্রতিটি পছন্দের চ্যানেলের জন্য আলাদা পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা কত জনের আছে? গরিব মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যমটিও এ বার দামি হয়ে উঠল।” নবদ্বীপের ছোট ব্যবসায়ী প্রদীপ দত্ত যেমন বলেন, “আলাদা-আলাদা দাম দিয়ে যদি চ্যানেল দেখতে হয় তা হলে এখন যতগুলো চ্যানেল ১৬০ টাকা দিয়ে দেখি ততগুলো দেখতে গেলে মাসে হাজার টাকা লেগে যাবে।’’ তবে এত দিন কেবল চ্যানেলের প্যাকেজে গ্রাহক কোন-কোন চ্যানেল দেখবেন সেটা ঠিক করতেন ব্রডকাস্টারেরা। এমওএস এবং এলওএস বা স্থানীয় কেবল অপারেটরদের কোনও ভূমিকা থাকত না চ্যানেল নির্বাচনে। কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থায় গ্রাহক কোন চ্যানেল দেখবেন তা তাঁরা নিজেরা বাছবেন। গ্রাহকদের একাংশ অবশ্য দাবি করছেন, এত দিন প্যাকেজে অনেক অপ্রয়োজনীয় চ্যানেল ভরা থাকত। এখন সেখানে বাছাই করা পে-চ্যানেল দেখলে খরচ হয়তো হরেদরে একই দাঁড়াবে।

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement