সংস্কৃতে জমে উঠছে আড্ডা

সেকালের বিখ্যাত নৈয়ায়িক বুনোরাম নাথের বসত ভিটেতে নবদ্বীপ বঙ্গবিবুধ জননী সভার ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে সংস্কৃতে কথা বলার প্রশিক্ষণ।

Advertisement

বিমান হাজরা ও দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

রঘুনাথগঞ্জ ও নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০০
Share:

সংস্কৃত-চর্চা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

শতাব্দী প্রাচীন ভিটের বিরাট থামওয়ালা বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছিলেন ওঁরা। কখনও একে অন্যের কথায় খিলখিলিয়ে উঠছেন। কখনও চলছে তর্কাতর্কিও। কিন্তু বিশুদ্ধ সংস্কৃতে ওঁদের সেই আলাপচারিতার মর্ম কেবল ওঁরাই বুঝতে পারছিলেন।

Advertisement

সেকালের বিখ্যাত নৈয়ায়িক বুনোরাম নাথের বসত ভিটেতে নবদ্বীপ বঙ্গবিবুধ জননী সভার ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে সংস্কৃতে কথা বলার প্রশিক্ষণ। নানা বয়সের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হলেই সংস্কৃতে জমে উঠছে আড্ডা।

প্রায় একই দৃশ্য দেখা গেল পড়শি জেলার রঘুনাথগঞ্জেও। রবিবার রঘুনাথগঞ্জ রবীন্দ্রভবনে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের ‘সুপ্রভাতম মিত্রঃ’ বলে সম্বোধন করে মঞ্চে সংস্কৃত ভাষায় খবর পড়তে শুরু করল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী প্রেরণা দে। ত্রিপুরায় নির্বাচন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় নেতাদের সতর্কবার্তা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের আলাপচারিতা—সবটাই বলা হল ঝরঝরে সংস্কৃতে। যা শুনে তাজ্জব উপস্থিত কয়েকশো শ্রোতা। পরের তিন ঘণ্টা ধরে মঞ্চে কেউ গাইলেন সংস্কৃত গান, কারও কন্ঠে সংস্কৃত কবিতা। মঞ্চস্থ হল একাধিক সংস্কৃত নাটক। এ ভাবেই রবিবার রঘুনাথগঞ্জে পালন করা হল ‘সংস্কৃত জনপদ সম্মেলনম্‌ ২০১৮’।

Advertisement

সংস্কৃত ভাষার শুভানুধ্যায়ীদের এই আয়োজন মঞ্চে শিক্ষক ভজন সরকার বলছেন, “বিশ্ব জুড়ে সংস্কৃতের উপর আগ্রহ বাড়ছে। অথচ এ দেশে সংস্কৃত ভাষার চরম অবহেলা দেখে কষ্ট হয়।” কথ্য সংস্কৃতের ব্যবহার বাড়াতেই এই সম্মেলনের আয়োজন বলে জানান সমিতির জেলা সংযোজক সুমন্ত প্রামাণিক। তিনি বলেন, “সংস্কৃত ভাষা এখন ব্রাত্য। এমনকি যারা কলেজে অনার্স পড়ছেন, দেবনাগরী হরফে তাঁরাও ততটা সড়গড় নন। সংস্কৃতকে বদ্ধ দশা থেকে মুক্ত করার জন্য এই আয়োজন।” একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত নবদ্বীপে অবশ্য সংস্কৃতকে বাঁচাতে উদ্যোগ চলছে প্রায় দেড়শো বছর ধরে। ব্রিটিশ ভারতে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হতেই নবদ্বীপের পণ্ডিত সমাজ ১৮৮৬ সালে তৈরি করেছিলেন দেশের প্রাচীনতম সংস্কৃত শিক্ষা সংসদ নবদ্বীপ বঙ্গ বিবুধ জননী সভা। এক সময় যার সভাপতি ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বহুদিন থমকে থাকার পরে কয়েক বছর ধরে বঙ্গ বিবুধ জননী সভা নতুন উদ্যমে সংস্কৃত চর্চায় নবদ্বীপে হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছে। সভার বর্তমান সম্পাদক নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের সংস্কৃতের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অরুণকুমার চক্রবর্তী জানান, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থান অনুমোদিত পাঠ্যক্রম অনুসারে এখানে ২০১৬ থেকে সংস্কৃতে কথা বলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এমন ভাবে এই পাঠ্যক্রম সাজানো যে, সহজেই কথ্য সংস্কৃত রপ্ত করে নিতে পারছেন নানা বয়সের পড়ুয়ারা।”

কিন্তু টুথপেস্টকে দন্তফেনকম্‌, চশমাকে উপনেত্রম, ব্ল্যাকবোর্ডকে কৃষ্ণফলকম্‌, চক কে সুধাখণ্ডঃ, ধূপকাঠিকে গন্ধবর্তিকা বলা কি সহজ কাজ? সংস্কৃত শিক্ষক অপর্ণাকিশোর চক্রবর্তী বলেন, “মানুষ তো অভ্যাসের দাস।’’

রঘুনাথগঞ্জের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী প্রেরণার বাড়ি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী উদাহরণ। মা বন্দনা দে, ইতিহাসে এমএ। বাবা গৌতম দে পুরকর্মী। বাড়িতে তাঁরা ইতিমধ্যেই সংস্কৃতকে কথোপকথনের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বন্দনা জানান, “মেয়ে রপ্ত করে নিয়েছে সংস্কৃতকে। আমরাও চেষ্টা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement