সিআরপিএফের এক আধিকারিককে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন মতিউরের মা আয়েশা বেওয়া।
এমনটা তো কথা ছিল না! শনিবার দুপুরেই ফোন করে বলেছিল, নভেম্বরে মাসখানেকের ছুটি নিয়ে বাড়ি আসবে। অথচ কী সব হয়ে গেল দেখুন! রবিবার সন্ধেয় ছেলে বাড়ি চলে এল। কফিনবন্দি দেহ বয়ে নিয়ে এল তারই সহকর্মীরা। ছেলে যা বলত, তাই-ই করত। এই প্রথম কথা রাখল না মতিউর!
শনিবার সন্ধ্যায় টিভিতে খবর দেখে বাড়িতে ফোন করেছিল মেয়ে। দুঃসংবাদটা তার কাছেই প্রথম জানতে পারি। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। আর বিশ্বাস হবেই বা কী করে! এই তো বেলা ১১টায় ছেলের সঙ্গে কথা বললাম। মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় সব শেষ!
সত্তর বছরের বৃদ্ধা মা বাড়িতে পড়ে থাকল। তাকে রেখে, ভরা সংসার ফেলে অকালে চলে যেতে হল ছেলেকেই। অথচ দেখুন, যাওয়ার তো কথা ছিল আমারই।
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ়ে নিহত জওয়ান, শোকস্তব্ধ সাগরদিঘি
ছেলের বড় ইচ্ছে ছিল একমাত্র নাতিটাকে মেডিক্যালে পড়াবে। তার জন্য চেষ্টাও করছিল। কিন্তু তা আর দেখে যেতে পারল কই? শনিবার ফোনে কথা হয়েছিল সাকুল্যে মিনিট চারেক। বলছিল, ফোনের টাওয়ার নেই। তাই বুথ থেকে ফোন করছে। জিজ্ঞেস করল, ‘‘কেমন আছ তোমরা?’’ বললাম, সব ঠিক আছে। শুধু তোর জন্যই চিন্তায় আছি। তোর ডিউটির জায়গাটা তো ভাল নয়। সাবধানে থাকিস। বলল, ‘‘আমার জন্য চিন্তা কোরো না। আমি ভোটের সময় তো ছুটি পাব না। ভোটটা মিটে যাক। তারপরেই চলে আসব।’’
আরও পড়ুন: সেনাতেই যোগ দেবে ‘আর্মি গ্রাম’ বোখরা
কিন্তু এ সব কী হয়ে গেল? এ ভাবে সব শেষ করে দিয়ে কফিনবন্দি অবস্থায় ছেলেকে দেখা কোনও মায়ের পক্ষে যে কতটা যন্ত্রণার তা বোঝানোর নয়। ছেলে বরাবরই চাইত সেনাতে যাবে। দেশের কাজ করবে। ওর বাবা, আমি কোনওদিন আপত্তি করিনি। বাধাও দিইনি। কিন্তু এ ভাবে ওরা আমার ছেলেটাকে মারল কেন, এতে কী লাভ হল ওদের? খুনোখুনি করে, কাউকে মেরে কখনও বড় কাজ করা যায় না। শুধু প্রার্থনা করি, আর যেন আমার ছেলের মতো এ ভাবে কখনও কাউকে অকালে চলে যেতে না হয়!