১৯৯৮ সালের ১৭ অক্টোবর। ধনেখালির দশঘড়া চৌমাথায় স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সাহেব আলির ক্ষতিবিক্ষত দেহ উদ্ধার করেন বাসিন্দারা। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান। বিরোধী দলের হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়ানোর ‘অপরাধে’ তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে।
ঘটনায় অম্বর মল্লিক, তুষ্ট সিংহ, শেখ মহসিন, লাল্টু মল্লিক, শেখ আল্লারাখা, আব্বাস আলি, লিয়াকত আলি, শেখ নিজাম এবং সেলিম মণ্ডল নামে ৯ সিপিএম কর্মী-সমর্থক-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আঠারো বছর মামলা চলার পর বৃহস্পতিবার চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা তথা বিশেষ বিচারক পুলক তেওয়ারি অভিযুক্ত ৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আজ, শুক্রবার আসামীদের সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।
ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী অসীমা পাত্র বলেন, ‘‘সিপিএম ধনেখালিতে খুনের রাজনীতি করত। বিচার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করত। সাহেব আলির ঘটনা তার একটা দৃষ্টান্ত। দেরিতে হলেও সত্য উদ্ঘাটিত হওয়ায় আমরা খুশি। বিচার বিভাগের উপর ভরসা রয়েছে। দোষীদের কী সাজা হয়, সে দিকেই তাকিয়ে আছি।’’
সিপিএমের ধনেখালি জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আদালতের রায়ের কথা শুনেছি। তবে পুরো খবর পাইনি। বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করব না।’’
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ সাহেব আলি বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় অম্বর মল্লিক, তুষ্ট সিংহরা দশঘড়া চৌমাথার কাছে তাঁকে ঘিরে ধরে। হাত পিছমোড়া করে বেঁধে বাসস্ট্যান্ডে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে সকলের সামনেই লোহার রড, লাঠি, বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তৃণমূল কর্মী সাহেব মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পালায় হামলাকারীরা। পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
সরকারি আইনজীবী চণ্ডীচরণ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পর দিন নিহতের বাবা শেখ তহিরুদ্দিন ধনেখালি থানায় সিপিএমের ৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হুগলির পুলিশ সুপারের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে আরও কয়েকজন সিপিএম কর্মীর নাম উঠে আসে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলে জামিনও পেয়ে যায়। মামলার তদন্তকারী অফিসার তারকেশ্বর মুখোপাধ্যায় ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেন। এত দিন ধরে একাধিক কোর্টে মামলা স্থানান্তরিত হয়। মোট ১৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের অধিকাংশই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত নয় জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। চার্জশিটে নাম থাকা অপর ১২ জনকে সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস ঘোষণা করেন বিচারক। চণ্ডীচরণবাবু বলেন, ‘‘যে ভাবে ওই যুবককে মেরে ফেলা হয়েছিল, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।’’