পায়ে-পা-মিলিয়ে। ডোমকলে এক সঙ্গে বাম ও কংগ্রেস। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
রাজনীতির মাঠে একের পর এক মৃত্যু ডোমকলে প্রায় তেলে জলে সম্পর্ক করে দিয়েছিল কংগ্রেস সিপিএমের। আর এবার একটা মৃত্যু মুছে দিল সেই দূরত্ব। বাম যুব সংগঠনের সদস্য মইদুল মিদ্যার মৃত্যুর প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজপথে এক সঙ্গে হাঁটল ডোমকলের বাম কংগ্রেস। যা দেখে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হল
নতুন জল্পনার।
তাহলে কি এবার ডোমকলের বাম কংগ্রেস জোট মজবুত হচ্ছে! উভয় রাজনৈতিক দলের কর্মী থেকে নেতারা বলছেন, ‘‘অবশ্যই হচ্ছে। আর কতদিন শাসক দলের অত্যাচার মেনে নেবে সাধারণ মানুষ। পরপর দুটি নির্বাচনে গণতন্ত্রের গলা টেপা হয়েছে, এমনকি গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি কংগ্রেস সিপিএমকে।’’ নানা রকমের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ওপরে বলে অভিযোগ উভয় দলের। দাবি, ‘‘ফলে এ বার লড়াই হবে জোট বদ্ধ ভাবে।’’
ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব এই মিছিলকে খুব বেশি পাত্তা দিতে না চাইলেও সাধারণ কর্মীরা কিন্তু লড়তে চায়এক সঙ্গে।
তাদের দাবি, ‘‘আমাদের নেতা অধীর চৌধুরী যখন আলিমুদ্দিনে বসে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করছেন এই অরাজকতার বিরুদ্ধে, তখন আমাদের পথে নামতে আপত্তি কোথায়। কোন নেতা কী বলল আমরা জানি না, আমরা নিজেদের তাগিদেই পথে হেঁটেছি।’’ এদিন ডোমকল ব্লক কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ছেলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম ছিলেন সেই মিছিলে। তিনি বলেছেন, "দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের, ফলে কোথা থেকে কী নির্দেশ এল না এল, সেটা দেখার সময় নেই। অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে এখন আমাদের একসঙ্গে লড়তেই হবে। আর তাই এদিন মইদুল মিদ্যার মৃত্যুর প্রতিবাদে আমরা একসঙ্গে পথে নেমেছি। এই প্রতিবাদ সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের প্রতিবাদ।’’
একটা সময় একের পর এক দলীয় কর্মীর মৃত্যু কংগ্রেস সিপিএমকে একেবারে আড়াআড়ি ভাবে ভাগ করে দিয়েছিল। এমনকি পাড়ার মাচা থেকে চায়ের দোকান পর্যন্ত ভাগ হয়ে গিয়েছিল এই মৃত্যুকে ঘিরে।
এমনকি গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে যখন জোটের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল সেই সময়েও ডোমকলে জোট হয়নি বাম কংগ্রেসের মধ্যে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, সে সময় জোট না হওয়ার পিছনে একমাত্র কারণ ছিল দলের কর্মীদের মৃত্যু।
কিন্তু তারপরে অনেক জল গড়িয়েছে। কেটে গিয়েছে পাঁচটা বছর, শাসক তৃণমূলের নানা রকমের অত্যাচার নেমে এসেছে উভয় রাজনৈতিক দলের উপর বলে অভিযোগ। এমনকি ডোমকল পুরসভার নির্বাচনে ও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা করতে পারেনি উভয় দল। ফলে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একটু একটু করে কাছে এসেছে বাম কংগ্রেস।
তা ছাড়া, এই জেলা যার অঙ্গুলিহেলনে চলে সেই অধীর চৌধুরী খোদ জোটের পক্ষে সাওয়াল করায় সাধারণ কর্মীরা আর পুরানো কথা মনে পুষে রাখতে রাজি নন।
তাদের দাবি, যারা খুন-জখমের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তারা এখন সবাই প্রায় শাসক দলে ভিড়ে গিয়েছে। যারা সাধারণ কর্মী তারাই পড়ে রয়েছেন সিপিএম কংগ্রেসে। আর দিনের-পর-দিন মার খাচ্ছেন শাসক দলের কর্মীদের হাতে। ফলে এবার জোট বদ্ধ হয়ে প্রতিরোধের পথে নামতে
চান তাঁরা।
ডোমকলের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘‘বাম কংগ্রেস কর্মীদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, মানুষ এখন দুর্নীতির পাহাড় ঠেলে ফেলতে চাইছে। উভয় দলের সাধারণ কর্মীরা একসঙ্গে পথ হাঁটতে চাইছে। আর আমরাও চাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোট বদ্ধ মানুষ রুখে দাড়াক। বাম কংগ্রেস এক সঙ্গে পথ চলুক।’’ সন্ধের পরে ডোমকলের মাচাতেও সে প্রসঙ্গ ফিরে এসেছে।