কয়েক মাস আগের উপনির্বাচনে সাগরগিঘিতেই জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস ও সিপিএম প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি কংগ্রেস ও সিপিএম। সাগরদিঘিতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাথমিক ফল দেখে এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিরকারবারির একাংশ।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ওই এলাকায় জোট না করে সিপিএম ও কংগ্রেস আলাদা ভাবে লড়েছিল। দু’দলের মিলিত ভোট ছিল প্রায় ৭৯ হাজার। কিন্তু জোট না হওয়ায় ৪৪ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী প্রয়াত সুব্রত সাহা। তিন মাস আগে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে জোটের সুফল পেয়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। ওই জয়ের প্রেক্ষিতে ‘সাগরদিঘি মডেল’ নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, তিন মাসে সাগদদিঘিতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল সাগরদিঘি মডেল। সাগরদিঘিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় ফিরল তৃণমূল। বিধানসভা উপনির্বাচনে জোটের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এগিয়ে (মোরগ্রামে সমান ভোট) প্রায় ২৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বার সেই সাগরদিঘিতে ১১টির মধ্যে ১০টিতেই নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। অবশ্য ১৩-১৩ সংখ্যায় পাটকেলডাঙায় বোর্ড ত্রিশঙ্কু। সেখানে বোর্ডের ভাগ্য নির্ভর করছে একমাত্র জয়ী বিজেপি সদস্যের সমর্থনের উপর। তবে তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মোদাশ্বর হোসেন বলেন, ‘‘তৃণমূলের উন্নয়নের ডাকে অনেকেই এগিয়ে আসবেন পাটকেলডাঙায় বোর্ড গড়তে।’’
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাগরদিঘির উপনির্বাচনে সিপিএম এবং কংগ্রেস জোটের প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসকে জেতাতে দু’টি দলই আন্তরিক ভাবে ঝাঁপিয়েছিল। ৬৫ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘির মানুষের ‘ক্ষোভ’কে কাজে লাগিয়েছিল তারা। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও প্রচারে গিয়ে তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার আবেদন করেন। তাতে কাজও হয়। সম্মিলিত বিরোধী ভোটের সমর্থনে বাইরন হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পঞ্চায়েত ভোটের মাসখানেক আগে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় দেবাশিসকে। তাঁর জায়গায় সভাপতি করা হয় সামশুল হোদাকে। প্রায় ৭৫ শতাংশ পুরনো মুখকে সরিয়ে প্রার্থী করা হয় নতুন মুখকে। প্রচারেও দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার কথা বলে তৃণমূল। তাতেই সংখ্যালঘুদের আস্থা অনেকটাই তারা ফিরে পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
মোদাশ্বর বলেন, “মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই প্রধান কাজ ছিল। যে কারণে বিধানসভায় জোট জিতেছিল, এ বার সেই কারণেই আমরা জিতেছি। আমাদের উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে গিয়েছিল। সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে আমরা সফল।’’ ২৫ দিন আগে সামশুল ব্লক সভাপতি হয়েছেন। তারপর থেকে তিনি একশোটিরও বেশি সভা করেছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জ্যোতিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “বিধানসভার উপনির্বাচনে যে আন্তরিক জোট ছিল, এ বার তা হয়নি। বহু আসনে জোটের মধ্যে লড়াই হয়ে ভোট ভাগ হয়েছে।’’
কংগ্রেস নেতা সইবুর শেখও বলছেন, “জোট ছাড়া যে জেতা যাবে না সাগরদিঘিতে, ২০১৬ সালেও তা প্রমাণিত হয়েছে। জোট হ য়নি, তাই পঞ্চায়েতে সাগরদিঘি মডেল ব্যর্থ। বাইরনের দল বদলও বড় কারণ মানুষের বিশ্বাস হারানোর।”