প্রতীকী ছবি
শুধু নদিয়া নয়, কলকাতা এমনকি ভিন্ রাজ্যে আনাজ জোগানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের অন্যতম বড় কেন্দ্র মদনপুরে আপাতত মন্দার ছায়া। সাধারণত যত আনাজ রোজ বস্তাবন্দি হয়ে রওনা হত, তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে দাম পড়তে শুরু করেছেন রাশি-রাশি জড়ো হওয়া আনাজের।
মদনপুর পাইকারি বাজার সূত্রে জানা যায়, ট্রেন বন্ধ থাকায় দূরের বহু পাইকার আসতে পারছেন না। কেবল আশপাশের কিছু পাইকার আসছেন, যাঁরা সড়কপথে আনাজ নিয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা এখান থেকে আনাজ কিনে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাতেন, তাঁদের আসা কার্যত বন্ধ। ফলে আনাজের জোগান চাহিদের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে। কম দামে আনাজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। আবার যে সব আনাজ অন্য রাজ্য থেকে আসত, সে সব কিছুই আসছে না।
লকডাউন শুরুর আগে মদনপুর পাইকারি বাজারে রোজ সাধারণত হাজার পাঁচেক পাইকের আসতেন। এখন তার অর্ধেকও আসছেন না। আশপাশ থেকে যাঁরা আসছেন, তারা টোটো-ভ্যান-রিকশায় চাপিয়ে আনাজ নিয়ে যাচ্ছেন। তাতে তাঁদের পরিবহণ খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। ট্রেন চললে এই খরচটা হত না। ফলে তাঁরা সেই খরচ তুলতে খুচরো বাজারে দর বাড়িয়ে দিতে পারেন, এই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সরাটির চাষি নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, “এখন মদনপুর বাজারে খুব ভিড় হচ্ছে চাষিদের। বাজারে আনাজ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই এই সময়ে যে আনাজের যত দাম পাওয়ার কথা চাষিদের, সেটা তাঁরা পাচ্ছেন না। ট্রেন চলছে না। সকলের লরি বা ছোট পণ্যবাহী গাড়ি ভাড়া করার সামর্থ্যও নেই। তাই কেউ বাইরে আনাজ নিয়ে যেতে পারছেন না।”
মদনপুর ভেন্ডার সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, স্থানীয় রেলস্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মের পাশে প্রায় ৬০ বছর ধরে আনাজের বাজার বসে। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার-হাজার মানুষ ‘ইন্দিরা সবজী বাজার’ নামে এই আনাজের বাজারে আসেন। তাঁদের কেউ কেনেন, কেউ বিক্রি করেন। বিহার থেকে টম্যাটো, সজনে ডাঁটা, রাঁচি থেকে মটরশুঁটি, বর্ধমান ও হুগলি থেকে আলু, বাঁকুড়া থেকে কুমড়ো আসে এই বাজারে। রাত ১২টা থেকে বেচাকেনা শুরু হয়, চলে ভোর গড়িয়ে বেলা পর্যন্ত। এ ছাড়াও, সারা দিনই কমবেশি আনাজ বিক্রি হয়। প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই বাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত।
মদনপুর ভেন্ডার সমিতির সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ বাছার বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলার পরে আমরা ভোর ৪টে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখছি। ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেক পাইকারই এলাকায় আসতে পারছেন না। এই বাজারে যদি বা আসছেন, আশপাশের বাজারগুলো তাঁদের দেখা পাচ্ছে না। সেই সব বাজারের চাষিরা এখানে আনাজ নিয়ে আসছেন। বাজারে আনাজের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
শিমুরালির আনাজ বিক্রেতা নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “যখন ট্রেন চালু ছিল, ভোর-ভোর মদনপুর গিয়ে আনাজ কিনে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেছি। এখন আর সেই সুযোগ নেই। সাইকেলে মদনপুর গিয়ে ভ্যানে করে আনাজ নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। সময়ও বেশি লাগছে। আনাজ বিক্রির সময় কমে গিয়েছে।” শেষমেশ কী দাঁড়ায়, কেউই আপাতত আন্দাজ করতে পারছেন না।
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।