প্রতীকী ছবি।
সন্তান প্রসবের পরেই করোনা ধরা পড়়েছিল সদ্য প্রসূতির। কিন্তু নবজাতক ছিল করোনা-মুক্ত। স্বভাবতই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন বাড়ির লোক। এইটুকু শিশুকে নিয়ে মা-কে কোন আইসোলেশন কেন্দ্রে পাঠানো হবে, সেখানে তারা কী ভাবে থাকবে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হবে কিনা, এই রকম একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে আসছিল।
শেষ পর্যন্ত একটু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। কালীগঞ্জের মধ্যে প্রথম সুলেখা বৈরাগ্য নামে ওই মহিলাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা চালানোর পরিকল্পনা নিলেন তাঁরা এবং তাতে সফলও হলেন। সুলেখা এখন করোনামুক্ত। তিনি ও তাঁর শিশু দু’জনেই পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন। পরিবারের লোকেরাও চিন্তামুক্ত ও খুশি। এলাকার লোকের মধ্যেও করোনা নিয়ে অযথা আতঙ্ক ও ব্রান্ত ধারণা ক্রমশ কমছে। সকলেই বুঝতে পারছেন, উপসর্গহীন রোগীদের বাড়িতে রেখেই ভালভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। বুঝতে পারছেন, করোনা আক্রান্তকে কিছুদিনের জন্য আইসোলেশনে রাখা জরুরি কিন্তু তাঁর অর্থ সেই ব্যক্তি বা পরিবারকে ঘেন্না করা বা একঘরে করা নয়।
সুলেখাদেবীর স্বামী বিশ্বজিৎ বৈরাগ্যের কথায়, ‘‘আমি লকডাউনের আগে ভিনরাজ্যে কাজে ছিলাম। সেখানে অনেক করোনা রোগী দেখেছি। কী ভাবে চিকিৎসা হয় সেটাও দেখেছি। তাই প্রথম যখন শুনলাম ওর পজিটিভ হয়েছে তখন ভয় পাইনি। বাড়ির সবাইকেও সাহস জুগিয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু একটাই দুঃখ ছিল যে, ছেলে হওয়ার পর চোদ্দো দিন তাকে কোলে নিতে পারিনি। দূর থেকে দেখতে হয়েছে। তবে এখন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। জীবন স্বাভাবিক। পাড়ার সবাই মিশছে, কথা বলছে। মানুষও এখন করোনার ব্যাপারে অনেকটা সড়গড়। প্রথমে ঠিক বুঝতে পারছিল না।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তিমিরকান্তি ভদ্র বলেন, ‘‘সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই। এখন খুব সাধারণ ভাবে অন্য রোগের মতো করোনার চিকিৎসাও বাড়িতে করা হচ্ছে। উপসর্গহীনদের ক্ষেত্রে সেটাই কাম্য। শুধু বাড়িতে তাঁকে কিছু দিন একটু আলাদা থাকতে হবে। পরিবারের সবাইকে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মানার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সুলেখা বৈরাগ্য আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল যাতে আমরা জয়ী হয়েছি।’’
জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় কালীগঞ্জের গোবরা গ্রামের বাসিন্দা সুলেখা বৈরাগ্যকে সন্তান প্রসবের জন্য বর্ধমানের কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাভাবিক ভাবে সন্তান প্রসব করলেও সেই সময় কাটোয়া হাসপাতালে কয়েক জনের করোনা ধরা পরে। তাই সুলেখাদেবী ও তাঁর সন্তানের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ি পাঠানো হয়। দু’দিনের মধ্যেই রিপোর্ট আসে। সুলেখাদেবী পজিটিভ তবে উপসর্গহীন আর সদ্যজাত নেগেটিভ। তার পর চোদ্দো দিন সুলেখাদেবী সন্তানকে নিয়ে বাড়িতেই আলাদা ঘরে থেকেছেন এবং করোনা জয় করেছেন।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)