সাগরদিঘিতে রক্ত দিলেন দুই পুলিশকর্মী। নিজস্ব চিত্র।
নবগ্রামের অজিত মণ্ডল এসেছিলেন মুমূর্ষু দাদুকে রক্ত দিতে। হাসপাতালে এসে রক্ত দিয়ে বাড়ি ফিরলেন করোনা আক্রান্ত অচেনা এক মুমূর্ষুকে। দু’দিন ধরে হন্যে হয়ে ঘুরেও ওই মুমূর্ষু রোগী রক্ত সংগ্রহ করতে পারছিলেন না।
চিকিৎসাধীন দাদুকে রক্ত দিতে সন্ধ্যে গড়িয়ে হাসপাতালে এসে নাতি অজিত দেখেন দাদুকে তত ক্ষণে রক্ত দিয়েছেন স্থানীয় দুই পুলিশ কর্মী। সুস্থ দাদুকে দেখে বাড়ি ফিরবেন নাতি অজিত মণ্ডল। এমন সময়ই শোনেন রক্ত সঙ্কটে ওই হাসপাতালেরই কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর পরিজনরা হন্যে হয়ে ঘুরছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। হাসপাতাল রক্ত শূন্য। একই গ্রুপের রক্ত জেনে এগিয়ে এলেন অজিত।
কৈয়র গ্রামের ৫৫ বছর বয়েসি এক অচেনা অজানা করোনা আক্রান্তকে রক্ত দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোলেন যখন, তখন চারিদিকের আঁধার কাটিয়ে হাসপাতাল জুড়ে জ্বলে উঠেছে হ্যালোজেনের উজ্জ্বল আলো।
রক্ত নেই জেলার বেশির ভাগ হাসপাতালেই। সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালও একই ভাবে রক্তশূন্য। এই ঘটনায় ফের যেমন সামনে এল রক্ত সঙ্কটের চিত্র, ঠিক তেমনই সামনে এল সঙ্কটে দিশেহারা মানুষের দিকে রক্তদানে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানবিক মুখও।
সাগরদিঘি থানারই সিভিক কর্মী দোহাল ডাঙাপাড়ার কোলেশ্বর মণ্ডল। তাঁর বাবা শ্রীকান্ত মণ্ডলকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয় সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রবিবার বিকেলে। তার জন্য রক্ত দরকার ছিল বি পজিটিভ।
কোলেশ্বর বলছেন, ‘‘একই গ্রুপের রক্ত রয়েছে আমার দাদা ও ভাগ্নের। দাদা বাইরে। ভাগ্নেও ফ্রিজ সারাতে মালদহে। কিছু করার নেই। অগত্যা সাগরদিঘি থানায় গিয়ে বলি বিপদের কথা। থানার দুই কর্মী এ এস আই দীপক দাস ও হোমগার্ড সুবীর দাস দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ বাবার গ্রুপেরই। তারা রাজিও হন হাসপাতালে বাবার জন্য রক্ত দিতে।"
সাগরদিঘি থানার ওসি সুমিত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘রক্তের সঙ্কট চলছে বলে পুলিশ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটা টিম। যে দুই পুলিশ কর্মীরা রক্ত দিতে রাজি হন তারা থানাতেই ডিউটিতে ছিলেন। মানবিক কারণে তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে রক্ত দেন দুজনেই।’’
এদিকে অসুস্থ দাদুর রক্ত লাগবে বলে যখন খবর যায় নবগ্রামের একরোল গ্রামে নাতির বাড়িতে, নাতি অজিত ততক্ষণে কাজে বেরিয়েছে বাইক নিয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে মালদহের গ্রামে।
সেখান থেকে কাজ সেরে ফিরতেই গড়িয়েছে বিকেল।
সাগরদিঘি হাসপাতালে এসে দেখেন দাদুকে ততক্ষণে রক্ত দিয়ে দিয়েছেন দুই পুলিশ কর্মী। দাদু তাতে অনেকটাই সুস্থ।
অজিত বলছেন, ‘‘দাদুকে দেখে বাড়ি ফিরব এমন সময় হাসপাতালে কান্নাকাটি শুনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারি এক গরিব করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি দুদিন ধরে ছোটাছুটি করেও বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে পারেননি। আমারও রক্তের গ্রুপ একই। বললাম চলুন আমি রক্ত দেব।’’
মুহূর্তেই থেমে গেল কান্না। সবার মুখে খুশির হাসি।রক্ত দিয়ে যখন বাইকে বাড়ি ফিরলাম তখন রাত গড়িয়েছে অনেকটাই। ‘‘অচেনা মানুষগুলোর মুখে হাসি আমার যে কতবড় প্রাপ্তি তা বলে বোঝাবার নয়’’, বলছেন গর্বিত অজিত।