শুনশান কাশিমবাজার স্টেশন।
কয়েক মাস আগেও স্টেশনের ছবিটা ছিল সম্পূর্ন আলাদা। সঠিক সময়ে ট্রেন ধরার জন্য প্ল্যাটফর্মে হাজার হাজার যাত্রীর হুড়োহুড়ি তো থাকতোই, সেই সঙ্গে থাকত হকার, নানা রকমের দোকানের মালিক কর্মচারীদের ভিড়। রেলকর্মীদের ব্যস্ততা। তবে সেই সব এখন অতীত। লকডাউনের জেরে বন্ধ ট্রেন চলাচল। প্রায় ছ’মাস স্টেশনে আর ট্রেন ঢোকে না। নেই টিকিট কাটার তোড়জোড়। গমগমে বহরমপুর শহরের বুকে একলা দাঁড়িয়ে থাকে মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার স্টেশন।
বহরমপুর শহর লাগোয়া কাশিমবাজার স্টেশন বহু বছরের পুরনো। স্টেশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন পর্বের আগে এই স্টেশনে প্রতিদিন প্রায় দু’ হাজার টিকিট বিক্রি হতো। প্রতিদিন কাশিমবাজার স্টেশনের উপর দিয়ে আপ ও ডাউন লাইনে মোট ১৭ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সকাল থেকে এই স্টেশনে তিল ধারণের জায়গা থাকতো না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে রেল পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারনে সাধারণ মানুষও আর স্টেশনমুখো হচ্ছে না। কাশিমবাজার স্টেশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়েছে, কিন্তু আমাদের রোজই নির্দিষ্ট সময়ে কাজে আসতে হয়। ফলে যাত্রীদের ভিড়ে গমগম করা রেলস্টেশনটিকে এখন বড্ড চোখে হারাচ্ছি। কবে যে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে!”
কাশিমবাজার স্টেশনে রয়েছে তিনটি প্ল্যাটফর্ম। লকডাউনের আবহে সেই তিনটি প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের বসার আসনগুলিতে যে ধুলো জমেছিল, দিন কয়েকের বৃষ্টিতে তা কিছুটা ধুয়ে গিয়েছে। স্যাঁতস্যাঁতে প্ল্যাটফর্মে মানুষের দেখা না মিললেও আরাম করে চোখ বুজেছে সারমেয়রা। স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেন না চললেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণের জন্য রোজই মালগাড়ি আসা যাওয়া করে। ফলে স্টেশনের আধিকারিক ও কর্মীদের কাজে ছুটি নেই।
মালগাড়ি থেকে পণ্য নামাবার সময় যে সামান্য চাল বা গমের দানা মাটিতে পড়ে যায়, ফাঁকা প্ল্যাটফর্মের সুযোগ নিয়ে তা খেতে উড়ে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রার দল। স্থানীয় বাসিন্দা ঝুলন দাস বলেন, ‘‘ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় খাঁ-খাঁ করছে গোটা স্টেশন। কয়েক মাস আগেও কত লোকের ভিড় থাকতো। করোনা পরিস্থিতিতে সেই সব কিছু যেন হারিয়ে গেল। আশা রাখি, খুব শীঘ্রই আবার সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাশিমবাজার স্টেশন চত্বরে প্রায় ৩০ টি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। সেই দোকানগুলিও এখন বন্ধ। রুজি রুটির টানে কেউ কেউ এখনও দোকান খুললেও লাভের মুখ দেখছেন না। স্টেশন চত্বরেই নিখিল পালের ঝালমুড়ির দোকান রয়েছে। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই বেশ কিছু যাত্রী সেই দোকানে ভিড় জমাতেন।
নিখিল বলেন, ‘‘কতদিন বেচাকেনা হয় নি,কতদিন স্টেশনে লোকজনের ভিড় দেখিনি। সন্ধ্যা হতেই এলাকা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়। একলা স্টেশনের ধার দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চোখে জল চলে আসে। এ ভাবে আর কত দিন চলবে, কে জানে!”