কৃষ্ণনগরে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সামনে আশাকর্মীদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ
এক দিনে ২৩ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ল করিমপুর ১ ব্লকে হোগলবেড়িয়ার রাজাপুর গ্রামে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে তিন বারের পরীক্ষায় একই গ্রামের ৩৯ জনের করোনা ধরা পড়ল।
প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এলাকায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ওই গ্রামের একটি পরিবারের পাঁচ জন-সহ ১১ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। দু’দিন পরে সোমবার গ্রামের অন্যদের পরীক্ষায় আরও পাঁচ জনের করোনা ধরা পড়ে। তৃতীয় বার আরও প্রায় ১৪০ জনের পরীক্ষায় বুধবার ২৩ জনের সংক্রমণের খবর আসে।
গত এক সপ্তাহ থেকেই প্রশাসন গ্রামটিকে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ বলে ঘোষণা করে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজাপুরে বাজারের পাশাপাশি প্রতিদিন আনাজ ও কলার বড় হাট বসে। সেখানে এলাকার কয়েক হাজার চাষি যেমন তাঁদের জমিতে উৎপাদিত আনাজ বিক্রির জন্য আসেন, তেমন রয়েছেন বহু ব্যবসায়ী যাদের অনেকে রাজ্যের বিভিন্ন আড়তে সেই মাল বিক্রি করতে যান। এ ছাড়াও হাটের মাল নিয়ে বহু গাড়ি বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। তার ফলে এই সংক্রমণ হতে পারে, আবার কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকা কয়েক জন বাড়িতে আসার ফলেও হয়ে থাকতে পারে।
সংক্রমিত গ্রামের মানুষজনের দাবি, গ্রামের প্রায় দুশো জনের পরীক্ষা হলেও এখনও প্রায় একশো জনের পরীক্ষা বাকি। খুব শীঘ্র তাঁদের পরীক্ষা করা দরকার। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত সাত দিন থেকে ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ করে গ্রামটিকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাপ্তাহিক লকডাউনে পুলিশ মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করলেও অন্য দিন বাজার-হাট সবই চলছে এবং প্রচুর মানুষের সমাগম হচ্ছে। সংক্রমণ আটকাতে প্রশাসনের স্থানীয় হাট ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এলাকার সমস্ত আনাজ ব্যবসায়ী ও বাজারের ব্যবসায়ীদের পরীক্ষা না করলে সংক্রমণ আরও বেশি ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
আক্রান্ত পরিবারের অনেকের অভিযোগ, প্রথম দুই বারে আক্রান্ত ১৬ জনকে সেফ হোমে নিয়ে যাওয়া হলেও বুধবারে আক্রান্ত ২৩ জন বাড়িতেই রয়েছেন। তাদের কী ভাবে বিধি মেনে চলা উচিত বা টেলিমেডিসিনে চিকিৎসা হবে কি না তার কিছুই তাঁদের জানানো হয়নি।
করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মনীষা মণ্ডল বলেন, “উপসর্গহীন অনেক রোগীকে বাড়িতে রাখা হচ্ছে এবং সে ক্ষেত্রে এলাকার আশাকর্মী ও ভিআরপি কর্মীরা রোগীদের সব রকম খোঁজখবর রাখছেন ও তাদের পরিষেবা দিচ্ছেন। ওই গ্রামেও স্বাস্থ্য কর্মীরা একই ভাবে রোগীদের সাথে যোগাযোগ রেখে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।”
করিমপুর ১-এর বিডিও অনুপম চক্রবর্তী জানান, গ্রামটি ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ করে সেখানে কঠোর ভাবে সরকারি বিধি মানা হচ্ছে। এলাকার সকলকে পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া চলছে। বাজারের ব্যবসায়ীদেরও পরীক্ষা করা হবে আর হাটে বাজারে-ভিড় এড়াতে এবং পারস্পরিক দূরত্ব যাতে বজায় থাকে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)