প্রতীকী ছবি
করোনা পরীক্ষা হয়েছিল তাঁর। অথচ, সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই তিনি দিব্যি বিমানে চড়ে চেন্নাই থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে চলে এলেন! সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছে গেলেন নদিয়ার শান্তিপুরে নিজের বাড়িতে। এর দু’দিন পরে তাঁর করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এক পরিযায়ী শ্রমিকের এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরে।
কী ভাবে বিনা বাধায় ওই শ্রমিক বিমানে চড়লেন, কেন করোনার রিপোর্ট আসার আগে তাঁকে চেন্নাই থেকে আসতে দেওয়া হল, বিমানবন্দরে নজরদারি ব্যবস্থার তা হলে কী হাল—এ রকম নানা প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে এখন। খবর পাওয়ার পরে তাঁর সহযাত্রীরাও সিঁটিয়ে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিমানে ওই শ্রমিকের সহযাত্রী, বিমানকর্মী এবং বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে যাঁরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে শান্তিপুর ব্লকের তিন জন রয়েছেন। তাঁদের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঠিক একই রকম ঘটনা কয়েক সপ্তাহ আগে ঘটেছিল পূর্ব-মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায়। সেখানে দক্ষিণ ভারত থেকেই দুই ব্যক্তি বিমানে চেপে ফিরেছিলেন এবং নিজেরাই বড়মা হাসপাতালে গিয়ে জানিয়েছিলেন যে, তাঁরা করোনা-আক্রান্ত। অর্থাৎ, তাঁরা আবার রিপোর্ট জেনেই বিমানে চেপেছিলেন। ওই বিমানের কর্মীদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছিল। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করেছিল তৃণমূল।
এ বারেও অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের দিকে তৃণমূল আঙুল তুলছে। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে সরব হয়েছেন। নমুনা নেওয়ার পরে রিপোর্ট আসার আগে কীভাবে তিনি বিমানে আসার ছাড়পত্র পেলেন? অসামরিক বিমান পরিবহন দফতরের এই দায়সারা কাজে বিপদ বাড়ছে।’’
এর পাল্টা রানাঘাটের সাংসদ বিজেপির জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই উপসর্গ থাকে না। ফলে বোঝা যায় না। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে। এই রাজ্যে তো লকডাউনের কোনও বিধিই মানা হয় না। যাবতীয় নিয়মকানুন শুধু বিজেপিকে আটকানোর জন্য হয়।’’
শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের গবার চর এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি কর্মসূত্রে চেন্নাইয়ে ছিলেন। গত ২৪ জুন সেখানেই করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁর লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। রিপোর্ট আসার আগেই তিনি গত ২৬ জুন বিমানে এই রাজ্যে ফেরেন। সে দিনই গভীর রাতে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে শান্তিপুর আসার পর তাঁকে একটি কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা হয়। শনিবার ব্লক স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারে, চেন্নাইয়ে তাঁর পরীক্ষা-রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য কৃষ্ণপদ রাহা বলেন, ‘‘রিপোর্ট আসার আগে কেন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল? আর ক’টা দিন তো অপেক্ষা করা যেত। এতে তো আরও অনেককে বিপদের মধ্যে ফেলে দেওয়া হল।’’