টুঙ্গি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
ডাক্তার আসতেন সপ্তাহে দিন দু’য়েক। বাকি দিনগুলো টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা বলতে ভরসা ছিলেন কেবল এক জন ফার্মাসিস্ট। রোগীরা তাই চলে যেতেন আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে রোজ বহির্বিভাগে ভিড় হত হাজার খানেক বা তারও বেশি রোগীর। কিন্তু আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে। লকডাউনে সেখানে যাওয়ার উপায়ও নেই। টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন তাই রোজ ভিড় দু’শো জনে পৌঁছে যাচ্ছে। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন সপ্তাহে ছ’দিনই চিকিৎসক যাচ্ছেন।
একটা সময় এই হাসপাতালে সর্বক্ষণের জন্য থাকতেন চিকিৎসক, নার্স সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মী। আউটডোর পরিষেবার পাশাপাশি মিলত জরুরি পরিষেবাও। তবে বিগত প্রায় পনেরো বছর ধরে কেবল চালু রয়েছে হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা। একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলে হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা। প্রায় এক বছর আগেও সপ্তাহে তিন-চার দিন হাসপাতালে চিকিৎসক যেতেন। বাকি দিন গুলিতে চিকিৎসককে পরিষেবা দিতে হত পাটিকাবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তখনই বাকি দিনগুলোর ভরসা ছিলেন শুধু ফার্মাসিস্ট। তবে বছর খানেক আগে পাটিকাবাড়িতে জরুরি বিভাগ চালু হওয়ায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক পাটিকাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে কাজে যোগ দেন। ফলে প্রায় এক বছর ধরে হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিনই চিকিৎসক মেহবুব হোসেন ও ফার্মাসিস্ট ইন্দ্রজিৎ কর্মকারকে পাওয়া যেত।
আদতে টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল বালি ১ ও বালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় কুড়িটি গ্রামের মানুষ। তবে তাঁদের ভরসা বেশি আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের উপরে। ফলে সপ্তাহে ছয় দিনই চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট থাকলেও রোগীর সংখ্যা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে জ্বর সর্দি হোক বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা, কুড়িটি গ্রামের মানুষের ভরসা এখন প্রত্যন্ত গ্রামের এই টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। লকডাউনের কারণে সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ওষুধের জোগান রয়েছে। ফলে চিকিৎসার পাশাপাশি মিলছে ওষুধও। স্বভাবতই আউটডোরে রোগীর ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টকে।
দমদমার বাসিন্দা মফেজুদ্দিন সেখ বলছেন, ‘‘আগে আমরা চিকিৎসার জন্য আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালেই যেতাম। আর এখন লকডাউন চলছে, গাড়ি ঘোড়া চলছে না। তা ছাড়া হাসপাতাল থেকে ওষুধও মিলছে। ফলে আমরা এই হাসপাতালেই চিকিৎসা করাচ্ছি।’’
হাসপাতালে ভিড় বাড়ায় হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট। হাসপাতালের চিকিৎসক মেহবুব হোসেন বলছেন, ‘‘লকডাউনের কারণে আগের তুলনায় রোগীদের ভিড় বেড়েছে। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।’’ তবে জরুরি বা গুরুতর সমস্যা ছাড়া হাসপাতালে আসতে বা সাধারণ ভাবে বাইরে বেরোতে নিষেধ করছেন চিকিৎসক। নওদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুকেশকুমার সিংহ বলছেন, ‘‘এখন সপ্তাহে ছয় দিনই আউটডোর পরিষেবা চলছে। ওষুধও রয়েছে। দু’টি পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন টুঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ভিড় করছেন।’’ হাসপাতালের আবাসনগুলি বাসযোগ্য নয় বলে পাটিকাবাড়ি থেকেই যাতায়াত করছেন চিকিৎসক।