এখনও ঝুলছে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার ফ্লেক্স। কৃষ্ণনগরের রাস্তায়। সোমবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি রাখা না-রাখা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর হরিণঘাটা শহরের একটি কার্যালয় থেকে তাঁর ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও সোমবার হরিণঘাটা শহর তৃণমূল সভাপতি উত্তম সাহা দাবি করেন, “ছবি সরানো হয়নি। ঠিক কী ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
তবে আপাতত পার্থের পাশ থেকে সরে যায়নি তাঁর দল। তিনি ‘দোষী’ প্রমাণ না হওয়া ইস্তক তাঁর বিরুদ্ধে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দলীয় কার্যালয় থেকে পার্থের ছবি সরিয়ে দেওয়ার কোনও নির্দেশ নেই। এ প্রসঙ্গে সোমবার তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী রত্না ঘোষ বলেন, “আমার কাছে এখনও দলের তরফে এ রকম নির্দেশ আসেনি।”
গোটা রাজ্যের মতোই নদিয়া জেলার অধিকাংশ তৃণমূল কার্যালয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আছে। বিভিন্ন সভা-সমিতি বা তোরণ-ফেস্টুনেও তাঁদের ছবিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ দীর্ঘদিন নদিয়া জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন। সে কারণে এই জেলায় তাঁর আসা-যাওয়া এবং প্রভাব দুই-ই বেশি ছিল। বিশেষ করে নদিয়ার একেবারে দক্ষিণে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেশি। হয়তো সেই কারণেই কৃষ্ণনগর থেকে নবদ্বীপ, করিমপুর বা তেহট্ট থেকে কালীগঞ্জ বা নাকাশিপাড়া, শান্তিপুর থেকে রানাঘাট— কোথাও তৃণমূল কার্যালয়ে পার্থের ছবি না থাকলেও একেবারে উত্তর ২৪ পরগনা ঘেঁষা হরিণঘাটা ও কল্যাণীর কার্যালয়ে বা প্রভাবশালী নেতাদের অফিসে পার্থের ছবি রয়েছে। অন্তত এত দিন ছিল।
তৃণমূল সূত্রের খবর, হরিণঘাটা ব্লক সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ এবং কল্যাণী শহর সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কুর অফিসে পার্থের ছবি রয়েছে। দলের নেতাদের একাংশের মতে, মমতা-অভিষেক বাদে অন্য নেতার ছবি কার্যালয়ে রাখা আপত্তিজনক কিছু নয়। শান্তিপুরে দলীয় কার্যালয়ে যেমন দীর্ঘদিনের বিধায়ক-পুরপ্রধান প্রয়াত অজয় দে-র ছবি রয়েছে। তবে পার্থ নদিয়ার জনপ্রতিনিধি নন, ভোটার নন, ভূমিপুত্রও নন। ফলে কেবল মহাসচিব বা পর্যবেক্ষকের পদমর্যাদার কারণেই কি পার্থের ছবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে— এমন প্রশ্ন এখন দলের ভিতর থেকেই উঠছে।
এ প্রসঙ্গে কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি দলের ভাবনায় চলি। দলীয় কার্যালয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আছে। কার্যালয়ের ভিতরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবিও আছে। তিনি এসেছিলেন, তাই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।”
আর হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের প্রশ্ন, “আমার অফিস থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি সরাব কেন? দল কি তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে না মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছে?”