কাদায় ডুবেছে বাজার। নিজস্ব চিত্র
ফের লোকালয়ে বাজার ফেরানো নিয়ে আনাজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরোধ চরমে উঠল। বুধবার রঘুনাথগঞ্জ শহরের আনাজের এই পাইকারি বাজার ম্যাকেঞ্জি মাঠ থেকে তুলসী বাড়িতে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে রঘুনাথগঞ্জের পাইকারি আনাজের বাজার শহরের তুলসীবাড়ি এলাকা থেকে গত ২৬ মার্চ পুলিশ ও পুরসভা তুলে নিয়ে যায় সদরঘাটে। বাজারে ভিড় বাড়তে থাকায় বাজার সরাবার দাবি তোলেন সদরঘাটের বাসিন্দারাও। ফলে পুলিশ সে বাজার সরিয়ে দেয় ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়াম মাঠে। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠে কয়েকশো লোকের ভিড় ও যানবাহনের যাতায়াতে সেই কর্দমাক্ত মাঠে বাজার চালানো অসম্ভব জানিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বুধবার থেকে পাইকারি বাজার ফের তুলসীবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। এতেই বেঁকে বসেছেন তুলসীবাড়ি লাগোয়া কয়েকশো বাসিন্দা।
বাসিন্দাদের আপত্তির কারণ, শহরের মধ্যে সবচেয়ে ঘন বসতির লোকালয় তুলসী বাড়ি। ম্যাকেঞ্জির মতো মাঠেও যেখানে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে তুলসী বাড়ির আয়তন ম্যাকেঞ্জির ১০ শতাংশও নয়। সামাজিক দূরত্ব পালন যেখানে আবশ্যিক বিধি, সেখানে তুলসী বাড়িতে লোকালয়ের মধ্যে বাজার ফিরিয়ে আনা অনুচিত।
জঙ্গিপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য তথা বিদায়ী উপ পুরপ্রধান সমীর পণ্ডিত তুলসী বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা বাজার চালাতে ম্যাকেঞ্জি স্টেডিয়াম মাঠ ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তুলসীবাড়িতে লোকালয়ের মধ্যে সে বাজার সরিয়ে আনার কোনও অনুমতি পুরসভা দেয়নি।’’
ইতিমধ্যেই প্রশাসন ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন বাসিন্দারা। তুলসীবাড়ি বাজারের উপযুক্ত নয়। করোনা পরিস্থিতিতে তো নয়ই।
সিপিএম নেতা ও জঙ্গিপুর পুরসভার বিদায়ী দলনেতা সুবীর রায় বলছেন, “করোনা ক্রমশ বাড়ছে এ জেলাতে। সেই সময় বাজার লোকালয়ে ফিরিয়ে আনা ঠিক পদক্ষেপ নয়। শহরের সুরক্ষার স্বার্থেই বাজার তুলসীবাড়িতে ফিরিয়ে আনলে তার মাসুল গুনতে হবে স্থানীয় বাসিন্দাদের।” কংগ্রেসের জঙ্গিপুর মহকুমা সভাপতি হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ একেবারে ঠিক। বাজারে লোকালয়ের মধ্যে আনার সিদ্ধান্ত কার? পুলিশেরই উচিত শহরের স্বার্থে এই পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা।’’
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাজার সরাবার কোনও অনুমতি পুলিশ দেয়নি। ব্যবসাদাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিল আর হয়ে গেল? আমি কথা বলছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। বাজার এখনই সরানো যাবে না।” আনাজের পাইকারি ব্যবসায়ী প্রণবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামে এত কাদা যে বাধ্য হয়েই তুলসী বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দূরত্ব বিধি মেনেই ব্যবসা করব।’’ তবে তুলসী বাড়ির একটি ক্লাবের দাবি, মাঠে বাজার বসতে তারা কিছুতেই দেবে না।