মৃত বিজয় শীল। নিজস্ব চিত্র।
অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের থেকে উঠে আসা এক গাড়িচালক। বছর সাঁইত্রিশের সেই বিজয় শীলের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছে।অভিযোগের দড়ি টানাটানি চলছে বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। উভয় দলই মৃতকে নিজেদের দলের সদস্য হিসাবে দাবি করেছে। বিজেপির দাবি, এটা খুন। আর তৃণমূল বলছে আত্মহত্যা। পুলিশ যদিও জানিয়েছে, তদন্তের পরেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
কল্যাণীর গয়েশপুরের বাসিন্দা বিজয়ের ঝুলন্ত দেহ রবিবার সকালে পুলিশ তাঁর বাড়ির পাশের আমবাগান থেকে উদ্ধার করে। মৃত যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তাঁর স্ত্রী অমলি শীল সরাসরি কিছু বলতে চাননি। এক ছেলে ও এক মেয়েকে পাশে নিয়ে তিনি এ দিন অঝোরে কেঁদেই গিয়েছেন আর স্বামীর মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এই ঘটনাকে ঘিরে রবিবার দিনভর কল্যাণী বিধানসভা এলাকার রাজনীতি তপ্ত ছিল। রাজনৈতিক মহলের খবর, তৃণমূল বা বিজেপি উভয় পক্ষই একে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে।
নিহতের বাড়ি এ দিন বিকেলের দিকে যান বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। বিজেপির স্থানীয় নেতারাও দিনভর নিহতের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন। আজ সোমবার নদিয়ার কল্যাণীতে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ও সব থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিজেপি। আবার গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও সহ সভাপতি মানিক পালও লোকজন নিয়ে একাধিক বার নিহতের বাড়িতে যান। বিকেলের দিকে যান তৃণমূলের আরও কয়েক জন স্থানীয় নেতা।
গত লোকসভা ভোটে কল্যাণী বিধানসভার বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের ভরাডুবি হয়। কিন্তু গয়েশপুর পুর এলাকা থেকে প্রায় ৫ হাজার ভোটে লিড পায় তৃণমূল। পরে অবশ্য গয়েশপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খানিক বদল এসেছে। বিজেপি তলায়-তলায় শক্তি বাড়িয়েছে। আর সামনেই বিধানসভা ভোট। তার আগে বিজেপির একটা বিষয় বা ‘ইস্যু’র দরকার ছিল। বিজেপির জেলা স্তরের এক নেতা বলছেন, বহুদিন ধরে দল এলাকায় কোনও আন্দোলনে ছিল না। রাস্তায় তেমন ভাবে নামেনি দলীয় কর্মীরা। ফলে এই একটা ঘটনায় সকলে এককাট্টা হয়ে রাস্তায় নামার পরিকল্পনা নিয়েছে।
তাই সোমবার বিজেপির ডাকা বন্ধ আটকাতে মরিয়া তৃণমূল। গয়েশপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি সুকান্তবাবু বলছেন, ‘‘বিজেপিকে এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়ব না। গয়েশপুরে গত লোকসভাতেও তৃণমূল জয় পেয়েছিল। এ বারও জিতবে তৃণমূল। বন্ধ মোকাবিলার জন্য আমি নিজে রাস্তায় নামব।’’ আবার বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায়ের কথায়, ‘‘তৃণমূল যে আমাদের কর্মীকে মেরেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই মানুষই এই বন্ধ সফল করবে।’’