বহরমপুর জেলা কার্য্যালয়ে ঢুকছেন অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র
দুপুর থেকে মেঘ ছিল। তবে, শুক্রবারের সেই মাঝ-দুপুরে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যে এমন একটা বড় ধাক্কা আসতে পারে, অনুগামীরা অন্তত তা ভাবতে পারেননি। তার প্রকাশ ছিল না। কিন্তু কোথায় যেন ফুটে উঠছিল অস্বস্তি।
প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব হারিয়ে অধীর চৌধূরী অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা রুটিন রদবদল নিতান্তই এআইসিসি’র সিদ্ধান্ত।’’ তা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই যেমন জানিয়ে রাখছেন, তেমনই বলছেন, ‘‘দল যে ভাবে বলবে সে ভাবেই কাজ করব। দলীয় সব কর্মসূচিতেই যাব নিতান্তই এক জন দলের সৈনিক হিসেবে।’’ কিন্তু এই অপসারণ কি তাঁকে বিজেপি’র দিকে ঠেলে দেবে? বলছেন, ‘‘প্রশ্ন নেই। এখন নানা জনে নানা কথা বলবে, নানান কল্পনা হবে। আমি কংগ্রেসে ছিলাম, আছি।’’ সেই সঙ্গে, বহরমপুরের বাড়ি থেকে জানিয়ে রাখছেন, তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার জন্য কিছু দিন ধরেই তিনি রাহুল গাঁধীর কাছে অনুরোধ করে আসছিলেন।
তবে, ঘনিষ্ট সূত্রে খবর, তাঁকে অপসরন করা হয়েছে শুনেই অধীর বলেন, ‘ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্যই!’ এ ব্যাপারে এখনই কিছু ভাবছেন না, পরে ভাববেন। তবে, তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর লড়াই জারি থাকবে। বছর কয়েক আগেও তাঁর খাসতালুক মুর্শিদাবাদে তিনিই ছিলেন শেষ কথা। তৃণমূলের ভরা-জোয়ারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বদলটা শুরু হয়েছিল শাসক দল দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পরে।
দলের ডান-বাঁ হাতগুলি একে একে তৃণমূলে ভেড়া শুরু হয়। একে একে খোয়াতে থাকেন তাঁর রাজ্যপাট। তা সত্ত্বেও, দু’দিন আগেও দলীয় কর্মীসভায় গিয়ে তিনি বলে এসেছেন, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস আবার ফিরে আসবে স্বমহিমায়।’’
অধীর চৌধুরীর সেই অপারজেয় রাজনৈতিক মানসিকতার প্রথম পরিচয় মিলেছিল ছাত্রাবস্থায়তেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তখন জেহাদ ঘোষণা করেছিল নকশালপন্থীরা। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বহরমপুর শহরের আইসিআই স্কুলের জানালার শিক বেঁকিয়ে ‘বুর্জোয়া’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে গিয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র অধীর ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ স্লোগান দিয়ে আত্মগোপনের রাজনীতিতে হাতে খড়ি দেয়। ‘মিসা’ আইনে ধৃত অধীর ১৯৭৭ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বছর দশেক নানা ধরণের বির্তকিত জীবন কাটান।
তারপর সংসদীয় রাজনীতিতে আস্থাশীল সরকারি বামপন্থীদের আঁচে তাপে তিনি বড় হতে থাকেন। পরে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে নবগ্রাম বিধানসভায় দলীয় প্রার্থী হন।
‘দুঃসাধ্য’ নবগ্রাম জয় করার আড়াই বছর পর ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বরাবরের ‘অধরা’ কেন্দ্র বহরমপুর লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে নিজের সংসদীয় রাজনৈতিক ‘ক্যারিয়ার’ পাকাপোক্ত করেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। তার পর থেকে গত বারো বছর ধরে মুর্শিদাবাদ শুধুই অধীর-ম্যাজিক দেখে এসেছে।
২০০৬ সালের বিধানসভা নিবার্চনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট অস্বীকার করে দলের দুই বিধায়ক অতীশ সিংহ ও মায়ারানি পালকে হারিয়ে নিজের অনুগামী নির্দল অপূর্ব সরকার ও মনোজ চক্রবর্তীকে বিধায়ক করেন। অপূর্ব তৃণমূলে চলে গেলেও মনোজ আছেন অধীরের সঙ্গে। মমতার সঙ্গে সেই বৈরিতা ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে ও ভোটের পরেও একই অবস্থায় থাকে। বৈরিতার কারণে জোট সরকার থেকে অধীরের নির্দেশে কংগ্রেস বেরিয়ে আসে। তার আগেই ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর তাঁকে রেলের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন।