কান্দিতে বধূর মৃত্যু, অভিযুক্ত এএসআই

পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারেন না স্বামী। তাঁর খোঁজে রোজ রাতে বাড়িতে আসে পুলিশ। অভিযোগ, তল্লাশির নামে পুলিশ রীতিমতো হেনস্থা করে পলাতক ওই কংগ্রেস নেতার স্ত্রী-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। সোমবার রাতে পুলিশের সেই ‘অত্যাচার’ চরমে ওঠে। পুলিশের কুকথা সহ্য করতে না পেরে ওই কংগ্রেস নেতার স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ। নাম চৈতালি বেগম (৩০)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কান্দি শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৩
Share:

পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারেন না স্বামী। তাঁর খোঁজে রোজ রাতে বাড়িতে আসে পুলিশ। অভিযোগ, তল্লাশির নামে পুলিশ রীতিমতো হেনস্থা করে পলাতক ওই কংগ্রেস নেতার স্ত্রী-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। সোমবার রাতে পুলিশের সেই ‘অত্যাচার’ চরমে ওঠে। পুলিশের কুকথা সহ্য করতে না পেরে ওই কংগ্রেস নেতার স্ত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ। নাম চৈতালি বেগম (৩০)। মঙ্গলবার সকালে মুর্শিদাবাদের কান্দির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন চৈতালি। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যেরা এই মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী করছেন কান্দি থানার পুলিশকে। এ দিনই কান্দি থানার এএসআই বিজয় পালের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করেছেন চৈতালির শ্বশুর জাফর আলি। জাফরের অভিযোগ, ‘‘সোমবার রাতেও বাড়িতে এসে ওই পুলিশ আধিকারিক চৈতালিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও কুরুচিকর মন্তব্য করেন। নাগাড়ে ওই অপমান সহ্য করতে না পেরেই বৌমা নিজেকে শেষ করে দিল। ওই পুলিশ অফিসারের কঠোর শাস্তি চাই।’’

পারিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চৈতালির স্বামী আজিজুল হক কান্দি এলাকায় কংগ্রেসের সক্রিয় নেতা বলে পরিচিত। ২০১৫ সালে পুরভোটে কান্দির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোটে তিনি জিততে পারেননি। কিন্তু তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে মারপিট, বেআইনি ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা-সহ কান্দি থানায় প্রায় আটটি মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisement

সেই সূত্রেই পলাতক আজিজুলের খোঁজে পুলিশ তাঁর বাড়িতে তল্লাশিতে যেত। জাফরের অভিযোগ, ছেলেকে না পেয়ে পুত্রবধূ চৈতালি-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নানা ভাবে হেনস্থা করতেন ওই এসএসআই। রাতবিরেতে বাড়িতে এসে যে কোনও ঘরে ঢুকে পড়ত পুলিশ। নেতৃত্বে থাকতেন ওই এএসআই বিজয়বাবু। সোমবার রাতেও বিজয়বাবু-সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী এসেছিলেন।

চৈতালির শাশুড়ি কেরিমা বিবির অভিযোগ, সকলের সামনে ওই পুলিশ অফিসার চৈতালিকে এমন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন যে সহ্য করা কঠিন হয়ে যেত। সোমবার রাতে সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। আজিজুল পুলিশের ভয়ে বাড়ির বাইরে। চার বছরের ছেলেকে নিয়ে চৈতালি থাকতেন। কিন্তু পুলিশের অত্যাচারে বাড়ির সকলের রাতের ঘুম মাথায় উঠেছিল। কেরিমার কথায়, ‘‘সন্ধ্যা নামলেই ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকত বৌমা। কিন্তু ও যে এ ভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে বসবে তা আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।”

পুলিশের তল্লাশির দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন পড়শিরাও। তাঁদের অনেকেই এ দিন বলেছেন, ‘‘তল্লাশির নামে এই বাড়িতে এসে রীতিমতো অত্যাচার চালাত ওই এএসআই। দুমদাম মহিলাদের ঘরে ঢুকে পড়ত। অথচ সঙ্গে কোনও মহিলা পুলিশ থাকত না। কেউ কিছু বলতে গেলে উল্টে তাকে গ্রেফতার করার হুমকি দিত এএসআই। চৈতালিকেও নানা কুকথা বলত।’’

এ দিন ফোনে আজিজুল বলেন, ‘‘তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে। কংগ্রেস করি বলেই পুলিশ বাড়িতে এসে অত্যাচার করত। বিজয় পালের জন্যই আমার স্ত্রীকে মরতে হল।’’ কান্দির কংগ্রেস প্রার্থী অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘ওই এএসআই তৃণমূল নেতাদের কথা মতো কাজ করেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে ওঁর অপসারণের দাবি জানিয়েছি।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলকে জড়ানোর কোনও অর্থ নেই। পুলিশের উচিত তদন্ত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে ওই এএসআই বিজয় পাল বলেন, ‘‘ওঁরা কেন আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যে অভিযোগ করছেন বুঝতে পারছি না।’’ কান্দির এসডিপিও রাজ করণ নাইয়ার বলেন, “আজিজুল হকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। কিন্তু সে পলাতক। তাঁর খোঁজেই পুলিশ আজিজুলের বাড়িতে তল্লাশি করতে যেত। তবে ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement