উদ্বেগের দিনরাত্রি: জলঙ্গিতে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
জাল নোটের কারবারি বা চোরাপাচারকারীরা মুর্শিদাবাদের ভৌগোলিক অবস্থানের যে সুযোগ নেয়, কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনও তা নিতে পারে। এই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের একাংশের মধ্যে থেকেই। সীমান্ত জেলায় একসময় ডিএসপি ছিলেন কামাখ্যাচরণ মণ্ডল। তিনি বলছেন, “দেশের ৬১৪টি জেলার মধ্যে জনসংখ্যায় নবমতম স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২১.০৯ শতাংশ। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড সব রয়েছে এদের। আধার কার্ড এখন বন্ধ। কিন্তু শমসেরগঞ্জে অন্তত ১০টি গ্রামে আধার কার্ড তৈরি হচ্ছে বেআইনি ভাবে। সেখানেই বিপদের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’ তিনি বলছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে সীমান্ত পথে যাতায়াতের বড় ঘাঁটি হল সুতি, জঙ্গিপুর, লালগোলা ও ডোমকল, জলঙ্গি। লক্ষ্যনীয়, জঙ্গি সন্দেহে যারা ধরা পড়েছে তারা সকলেই সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।” জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আধার এক ধরনের পরিচয়পত্র। গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখে এব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।"
তাঁর আরও সংযোজন, “মুর্শিদাবাদ সীমান্তে পাচার বা অনুপ্রবেশ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভয়টা হল পাচারের আড়ালে যারা ঢুকছে তাদের মধ্যে আল কায়দা বা মুজাহিদিন বাংলাদেশের সদস্যরা নেই তা কে বলতে পারে? দুটি বিস্ফোরণ কাণ্ডে যারা ধরা পড়েছে তারা বাংলাদেশি নয় ঠিকই কিন্তু সেখান থেকে প্রশিক্ষণ ও মদত তো পাচ্ছে। তাই শুধু এখানেই থেমে গেলে হবে না। এন আই এ’কে আলাদা শাখা অফিস খুলে নজরদারি বাড়াতে হবে মালদহের মতো মুর্শিদাবাদেও। কারণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ফরাক্কা ব্যারাজ, একাধিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সেনা ছাউনি রয়েছে জেলায়।’’ গোয়েন্দাদের একাংশ বলছে, বুদ্ধ গয়া বিস্ফোরণ, খাগড়াগড় কাণ্ডের পর আল কায়দা একটা অশনি সঙ্কেত। অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান জেলায় জঙ্গি ঘাঁটি তৈরির পক্ষে যথেষ্ট সুবিধাজনক বলেই কি এই ভাবে কখনও শমসেরগঞ্জ, কখনও ডোমকলে জঙ্গি ঘাঁটি বাড়ছে মুর্শিদাবাদে? একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত, অন্য দিকে ঝাড়খণ্ড, বিহার।
শুধু তাই নয়, ফরাক্কা থেকে ৮০ নম্বর জাতীয় সড়ক পথে সরাসরি বিহারের মোকামা। এই পথ ফাঁকা, নির্জন। স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশের নজরদারি নেই বললেই হয়। ফরাক্কা থেকে রেলপথে দেশের যে কোনও জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব সহজেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অসম অথবা কলকাতা। স্বভাবতই ভিন রাজ্যে যাওয়া এবং সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে গা ঢাকা দেওয়া এখানে অতি সহজ। তার উপরে ভিন রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে সহজেই মুর্শিদাবাদে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র পাইয়ে দিচ্ছে কালিয়াচকের দুষ্কৃতীরা। কালিয়াচক থেকে বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্রের জোগানও সহজলভ্য। গত দু’বছরে মুর্শিদাবাদে যে পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক এ জেলার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরই জোগানদার কালিয়াচক। স্বভাবতই শমসেরগঞ্জ, জঙ্গিপুর, লালগোলা হয়ে উঠেছে জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় স্থল। জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সব অভিযোগই অত্যন্ত গুরুতর। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’