সাগরদিঘি নির্বাচনের আনন্দের রেশ এখনও থেকে গিয়েছে জেলার বাম কংগ্রেস কর্মীদের মনে। ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘি নির্বাচনের আনন্দের রেশ এখনও থেকে গিয়েছে জেলার বাম কংগ্রেস কর্মীদের মনে। এক রকম নিয়মিত মিছিল সভায় সাগরদিঘিকেই আগামী নির্বাচনে মডেল করে পথ চলার বক্তব্য রাখছিলেন নেতারা। আর ঠিক সেই সময়ে বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলে যোগদান, খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাম-কংগ্রেসের কর্মীদের মনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে তৃণমূলের কিছু শিবিরেও চিন্তা বেড়েছে।
তবে অনেকেই বলছেন, বাম-কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে আগামী দিনে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে। তাঁরা জানাচ্ছেন, যাঁদের জন্য লড়াই করে ভোট করব, তাঁরাই হয়তো ফল প্রকাশের পর দিন থেকে লাইন দেবে শাসক দলে। চায়ের দোকান থেকে গ্রামের মাচায় বাম কংগ্রেস কর্মীদের আলোচনার কেন্দ্রে এখন একটাই বিষয়। যদিও বাম কংগ্রেস নেতারা উড়িয়ে দিচ্ছেন সেই আশঙ্কার কথা। তাঁরা বলছেন, বরং এই বিশ্বাসঘাতকতা থেকেই কর্মীদের মনে আরও জেদ তৈরি হবে। 'ঘোড়া' কেনার দলকে সাগরদিঘির মতোই আবারও ছুড়ে ফেলবে মানুষ।
তবে বিজেপির দাবি, এই পরিস্থিতি থেকে তাদেরই লাভ হবে। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদের দুটো বিধানসভায় দখল নিয়েছে বিজেপি। বেশ কয়েকটি বিধানসভায় দ্বিতীয় স্থানে তারা। ফলে বাম-কংগ্রেস জোটের সঙ্গে তৃণমূলের যদি লড়াই চরমে হয় তা হলে মাঝ থেকে সেই লড়াইয়ের লাভ তুলবে বিজেপি। যদিও জেলা বিজেপি নেতা শাখারভ সরকার বলছেন, "কোনও লড়াইয়ের প্রয়োজন হবে না, বিজেপি মুর্শিদাবাদে এমনিতেই ভাল জায়গায় রয়েছে। যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তা হলেই আমরা এই জেলায় ভাল ফল করব। অনেক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি দখলে আসবে আমাদের।" যদিও তৃণমূলের দাবি, এই জেলায় সামান্য দু'একটা জায়গায় ছাড়া বিজেপির তেমন কোনও সংগঠন নেই। কংগ্রেস আর সিপিএমের ভোটেই দুটো বিধানসভা দখল করেছে। মানুষের ভুল ভেঙে গিয়েছে। বিজেপিকে চিনে ফেলেছে, ফলে ওই দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভাল।
দলবদলের পরে এখন সব মহলেই চর্চার কেন্দ্রে বাইরন এবং বাম কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেকেই মনে করছেন এই ঘটনা তৃণমূলের কাছেও বুমেরাং হতে পারে। বিশেষ করে শাসকদলের সংগঠনে এই ঘটনা একটা বড় ধাক্কা দিতে পারে কারণ টিকিট বিতরণের সময় টিকিট না পেলেই বিশেষ করে দলের প্রভাবশালী নেতারা অন্য দলের হয়ে টিকিট নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের নিচু তলার কর্মীদের আরও বক্তব্য, মাত্র তিন মাস আগে যাঁকে হারাতে নামতে হয়েছিল, সেই তিনিই দলে চলে এলেন। তবে মুখে কোনও কথা কেউই বলছেন না। ঘরোয়া আলোচনায় এই প্রসঙ্গ উঠে আসছে।
তৃণমূল নেতা অপূর্ব সরকার অবশ্য সমস্ত আশঙ্কার কথা উড়িয়ে বলছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে যোগ দিয়েছেন বাইরন। আর সব কিছু বাদ দিলেও তাঁর পরিবারের ভোটগুলো অন্তত তৃণমূলে যাবে। এটাতেও তৃণমূলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। আর তাঁকে ভয় বা লোভ দেখানোর যে প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে, তা যদি হয় তা হলে দেশে আইন আছে, আদালত আছে, সেখানে যাবে।" যা শুনে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলছেন, "প্রথমত বাইরন বিশ্বাস একজন ব্যক্তি, সে একাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। তাঁর সঙ্গে কোনও এক জন কর্মীও যাননি। ফলে বাম-কংগ্রেস জোটের ক্ষতি হবে না।" আর জেলা সিপিএমের সম্পাদক জামির মোল্লা বলছেন, "সাগরদিঘির মানুষ মুখিয়ে রয়েছেন। এখনই নির্বাচন হলে আবারও তৃণমূল হারবে।’’