কৃষকরা সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না। ফলে নদিয়া জেলা থেকে ধান কেনার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হিমশিম অবস্থা খাদ্য দফতরের।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৩-’২৪ মরসুমে নদিয়া জেলা থেকে প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেরেকেটে ২ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। জেলার চালকল মালিক সংগঠন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বোরো মরসুমের ধান কেনার জন্য কয়েক দিন ধরে শিবির শুরু হয়েছে। কিন্তু সেখানে চাষিরা ধান বিক্রি করতে আসছেন না। আর হয়তো মেরেকেটে কয়েক হাজার মেট্রিক টন ধান পাওয়া যেতে পারে। তবে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর অনেক আগেই হয়তো থেমে যাবে ধান কেনা। এমনটাই মনে করছে খাদ্য দফতর।
সাধারণত খোলা বাজারে ধানের দামের চেয়ে সরকারি সহায়ক মূল্য কুইন্টাল পিছু অনেকটাই বেশি থাকে। ফলে সরকার পরিচালিত কিসান মান্ডি, সমবায় সমিতিতে ধান বিক্রি নিয়ে উৎসাহ থাকে চাষিদের। কিন্তু চলতি বছরে সেই ছবিটা একেবারেই আলাদা। জেলার একাধিক ব্লকের চাষিরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যা চলছে। গত বছর আমন মরসুমে সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
সরকার মূলত যে প্রজাতির ধান কেনে, জেলায় আমন মরসুমেই ওই ধান চাষ হয়। কিন্তু গত বছর জেলায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। ফলে জলের অভাবে আমন চাষ কম হয়েছে। আবার যে সব জমিতে চাষ হয়েছিল সেখানেও ফলন কম হয়েছে।
কালীগঞ্জের চাষি মহাদেব সাহা বলেন, “আবহাওয়ার খামখেয়ালির জন্য কয়েক বছর ধরেই ধানের ফলন মার খাচ্ছে। ফলে জোগানের থেকে চাহিদা বেড়েছে। এর জন্যই খোলা বাজারে ধানের দাম আকাশছোঁয়া। সরকার কুইন্টাল পিছু ধানের দাম দিচ্ছে ২১৮৩ টাকা। কিন্তু খোলা বাজারে স্বর্ণ, প্রতীক্ষার মতো মোটা ধান প্রায় ২২৫০ টাকা কুইন্টাল পিছু বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষি সরকারকে ধান বিক্রি করতে চাইছে না।”
নদিয়া জেলা রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, গণ বণ্টন ব্যবস্থা চালাতে জেলায় বছরে প্রায় ২ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল লাগে। এর জন্য সরকারকে প্রায় ৩ লাখ মেট্টিক টন ধান কিনতে হবে। সংগঠনের জেলা সভাপতি উত্তম দাস বলেন, “তিন লাখ মেট্রিক টনের লক্ষমাত্রা পূরণ হওয়া একপ্রকার অসম্ভব। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এই সমস্যা বলে মনে হচ্ছে।।”
খাদ্য দফতরের এক অধিকারিক জানান, সরকার চড়া শুল্ক চাপিয়ে রাখার জন্য চাল বিদেশে সে ভাবে রফতানি হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও বাজারে ধানের জোগান নেই। চলতি বছরে বর্ষা সে ভাবে না হলে এই সঙ্কট চলতেই থাকবে। তবে এফসিআই অন্য রাজ্যে বিশেষত ওড়িশায় প্রচুর ধান কিনেছে। নদিয়ার চালের ঘাটতি অন্য রাজ্যের চাল দিয়ে মেটানো হবে।
জেলার কৃষি আধিকারিক দীপঙ্কর রায় অবশ্য দাবি করেন, "ফলনের হার প্রায় একই আছে। খাদ্য দফতরকে ধানের উৎপাদনের হিসাবও দেওয়া হয়েছে। যে যে এলাকায় ধান উৎপাদন বেশি সেই সমস্ত এলাকা চিহ্নিতও করা হয়েছে। খাদ্য দফতর থেকে দেওয়া লিফলেটও বিলি করা হয়েছে চাষিদের কাছে। ধান কেনা আগের থেকে বেড়েছে। আশা করছি আরও বাড়বে।”
এ ব্যাপারে খাদ্য দফতরের আধিকারিককে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে
পাওয়া যায়নি।