হাসপাতালে মৃতের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসক মত্ত অবস্থায় ভুল অস্ত্রোপচার করায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল কল্যাণীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই মৃত রোগীর আত্মীয়েরা ওই বেসরকারি হাসপাতালে জমায়েত হতে থাকেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় পুলিশও। বুধবার হাসপাতাল থেকে রোগীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশের হাতে দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির ভাই বুধবার কল্যাণী থানায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রোগীর পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার সকালে ওই হাসপাতালে পিত্তথলির অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হন শিমুরালির বাসিন্দা মিঠুচন্দ্র শীল (৩৬)।সন্ধ্যা পর্যন্ত মিঠুকে না খাইয়ে রাখা হয়েছিল অস্ত্রোপচারের জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে অস্ত্রোপচারের অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছিল না বলে সে দিন অস্ত্রোপচার হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অস্ত্রোপচার হয়।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক জওহরলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মদ খেয়ে মত্ত অবস্থায় অস্ত্রোপচার করেছিলেন। ভুল অস্ত্রোপচারে রোগার শরীরের ভিতরে কোনও প্রত্যঙ্গ কেটে গিয়েছিল। তাতে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসক অধিকাংশ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ। চিকিৎসক আসার পর সন্ধ্যার দিকে পরিবারের লোকেদের রক্ত আনতে বলা হয়। রক্ত আনাও হয়। রাতের দিকে ফের রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচারের জন্য। তারপরেই রোগী মারা যান। অভিযোগ, মুখ বন্ধ রাখতে মৃতের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা দিতে চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর ভাগ্নে বিমলচন্দ্র শীল বলেন, ‘‘আমার মামাকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।’’
যদিও অভিযুক্ত চিকিৎসক জওহরলাল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘প্রথম অপারেশনের পর সেলাইয়ের জায়গা থেকে অল্প অল্প রক্ত বের হচ্ছিল। তাই রোগীকে বাঁচানোর জন্য দ্বিতীয়বার সেলাই খোলা হয়েছিল। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়!’’ এক বার অস্ত্রোপচারের পর যদি ক্ষত থেকে রক্ত বন্ধ না হয় তবে সেটা তো যিনি অস্ত্রোপচার করেছেন তাঁর ত্রুটি বলেই ধরতে হবে। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসকের উক্তি, ‘‘তা ঠিক নয়। ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের এটা হয়। এর সঙ্গে অস্ত্রোপচারে ত্রুটির সম্পর্ক নেই।’’ তবে মদ খেয়ে অস্ত্রোপচারের অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। ওই বেসরকারি হাসপাতালের প্রধান পরিমল বসু বলেন, “ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ঠিক নয়। রোগীর পরিবার মৃতদেহ রেখে দিয়ে এক কোটি টাকা চেয়েছিল। আমরাই বলেছি যে, আপনারা আইনের সাহায্য নিন। আমরা তদন্তের মুখোমুখি হতেরাজি আছি।”