রক্তের দাগ মুছে ফেলে স্কুলে রংচঙে আর্ট গ্যালারি

এক সময়ে দিন-দুপুরে খুন করে রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে যেত দুষ্কৃতীরা। স্কুলে যাতায়াতের পথে পড়ুয়ারা দেখত, গ্রামের বাড়ির দেওয়াল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৫
Share:

আর্ট: স্কুলের সেই গ্যালারি। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে দিন-দুপুরে খুন করে রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে যেত দুষ্কৃতীরা। স্কুলে যাতায়াতের পথে পড়ুয়ারা দেখত, গ্রামের বাড়ির দেওয়াল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে রক্ত।

Advertisement

রক্ত এখনও ঝরছে, তবে তা ক্যানভাসে। বহরমপুর শহর লাগোয়া হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হিকমপুর হাইস্কুলে গড়ে ওঠা আর্ট গ্যালারিতে ঠাঁই পেয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার নানা শিল্পীর আঁকা ছবি। এমনই এক ক্যানভাসে জ্বলজ্বল করছে রক্তে ছোপানো সূর্য। সম্প্রতি ওই স্কুলটিতে ‘মধুবন’ নামে ওই গ্যালারির উদ্বোধন করেন মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী দে বিশ্বাস। তিনি উচ্ছ্বসিত ভাবে বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের কথা ছেড়ে দিন, রাজ্যের অন্য কোনও স্কুলে এমন ঝকচকে আর্ট গ্যালারি আছে বলে আমি জানি না।’’ সিপিএমের নিমতলা লোকাল কমিটির সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন শেখ জানান, এক সময়ে হিকমপুর, গুরুদাসপুর, শহরবাসা, বেঁউচিতলা, সলুয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ তল্লাট জুড়ে দুষ্কৃতীরাজ চলত। খুন-বোমাবাজি-ছিনতাই লেগে থাকত। খুন হত দিনে-দুপুরে। রাস্তায় পড়ে থাকত লাশ। সেই এলাকায় সুন্দরের এমন উদ্‌যাপন ভাবাই যায় না। এখন ওই স্কুলকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন এলাকার মানুষ।

আর্ট গ্যালারির প্রায় সাতশো কুড়ি বর্গফুট ঘরে উঠে এসেছে গোটা বাংলা। মুর্শিদাবাদ-সহ কুড়িটি জেলার বিভিন্ন হস্তশিল্পের নিদর্শনে ঠাসা ঘর। রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের পটচিত্র ও মাদুর কাঠির কাজ, বাঁকুড়ার ডোকরা, টেরাকোটা, বেলমালা ও কাঠের কাজ, উত্তর ২৪ পরগনার পুঁতির কাজ, জলপাইগুড়ি লুপ্তপ্রায় বাদ্যযন্ত্র সারিঞ্জা ও দারুশিল্পের কাজ, কোচবিহারের শীতলপাটি, পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ। সঙ্গে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার নিজের শোলার কাজ, কাঠের কাজ, বাঁশের গুঁড়ির ও পাটের কাজ।

Advertisement

সংগ্রহশালার ভিতরে সাতটি দেওয়াল তুলে তৈরি হয়েছে ছোট-ছোট কেবিন। সেগুলিতে প্রতিটি জেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও দ্রষ্টব্য স্থানের ছবির কোলাজ, যাতে জেলাগুলিকে চেনা যায় সহজে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, সংগ্রহশালাটি গড়ে তোলার দু’টি উদ্দেশ্য— ১) কোনও পড়ুয়া সেখান এক পাক ঘুরে এলেই প্রতিটি জেলা সম্পর্কে এক ঝলকে বহু কিছু জানতে পারবে। ২) বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ দেখে কোনও পড়ুয়া যদি হস্তশিল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে চায়, স্কুল কর্তৃপক্ষই তাকে উৎসাহ জোগাবেন।

স্কুলের মাথারা ঠিক করেছেন, চার মাস অন্তর হস্তশিল্পের কর্মশালা করা হবে। কর্মশালায় বিভিন্ন ধারার হস্তশিল্পীদের কাছে হাতে-কলমে কাজ শেখার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। যা জেনে ইতিমধ্যেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে আকাশ শেখ, তুহিনা আখতার, আসিরুল শেখ, মনিজা খাতুনের মতো ছাত্রছাত্রীরা। অভিভাবকেরাও খুশি। তাঁদের কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েরা হাতে-কলমে কাজ শিখবে, কবিতা আবৃত্তি করবে, এ কী কম কথা!’’ বোনা-পিস্তল দেখে যাদের চোখ সয়ে গিয়েছিল, তারাই এখন অনভ্যস্ত হাতে তুলি ধরছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement