কৃষি ঋণ না দিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল হাঁসখালির ট্যাংড়া খাল এলাকার বয়েরভেঙি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় নদিয়া জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ওই সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকারও করে নিয়েছে ওই সমিতির পরিচালন সমিতি। সমিতির পরিচালন সমিতির সভাপতি শশাঙ্ক বিশ্বাস। তিনি আবার তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত নদিয়া জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। আর সম্পাদক তৃণমূলেরই আর এক স্থানীয় নেতা খগেন ঘোষ। ভোটের আগে বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, ‘‘এত বড় আর্থিক অনিয়মের আঁচ পরিচালন সমিতি আগে পায়নি, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’ জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির প্রধান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
ওই এলাকার কৃষকরা কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ চেয়ে ওই সমিতির কাছে আবেদন জানান। তারপর কৃষকদের পূর্বের আর্থিক লেনদেনের হিসেব-নিকেশ করে সেন্ট্রাল কো—অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ঋণ মঞ্জুর করে। ঋণের টাকা ওই সমিতিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, সমিতির তরফে সেই টাকা পুরোপুরি কৃষকদের দেওয়া হয়নি। কোনও কৃষককে এক টাকাও দেওয়া হয়নি। আবার কাউকে বা মঞ্জুর হওয়া ঋণের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দেওয়া হয়।
ফলে ওই ঋণের পুরো টাকাও পাচ্ছিল না সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। আর এতেই ব্যাঙ্ক কর্তাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় খোঁজ-খবর। আর তারপরেই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে।
তড়িঘড়ি সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতিকে শো—কজ করা হয়। শো-কজ করা হয়েছে ওই সমবায়ের ম্যানেজার সরোজ বিশ্বাসকেও। নদিয়া শিবনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই সমিতির ম্যানেজার কৃষকদের ঋণের টাকা দেননি। সেই টাকার পরিমান প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। ম্যানেজার লিখিত ভাবে ঘটনার কথা স্বীকারও করেছেন।’’
ওই সমবায়ের নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে। নতুন করে সমিতির অডিট করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওই সমিতিটি জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের যে শাখার অধীনে রয়েছে,তার ম্যানেজার ও সুপারভাইজারকেও শোকজ করা হয়েছে।
ওই সমবায়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি শশাঙ্ক বিশ্বাস বলেন, ‘‘একটা গড়মিল তো হয়েছেই। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনে এলেই সব পরিষ্কার হবে।’’ আর্থিক তছরুপের বিষয়টি সামনে আসতেই গ্রাহকদের মধ্যে ওই সমবায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ট্যাংড়া খাল এলাকার বাসিন্দা এক কৃষক বলেন, ‘‘ওই সমিতিতে আর টাকা রাখব না। এত টাকা লুঠ হয়ে যাওয়ার পরে আর ব্যাঙ্ক চলে নাকি! বন্ধ হয়ে গেলে আর টাকা ফিরে পাব না।’’ যদিও পরিচালন সমিতির সম্পাদক খগেন ঘোষ বলেন, ‘‘ম্যানেজারকে পরিষ্কার জানিয়েছি পুরো টাকাই শোধ করতে হবে। সেই মতো তিনি পরিশোধ করতে শুরুও করেছে।’’
আর খগেনবাবুর আরও দাবি, ‘‘আমরা কাগজ কলমে সই করি। কৃষকদের মধ্যে টাকা বিলি করি না। তা করেন ম্যানেজার। তাই তিনি কোন কৃষককে টাকা দেননি বা কাকে কম টাকা দিলেন, তা আমাদের বুঝতে পারার কথা নয়।’’ শুক্রবার ম্যানেজার সরোজ বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরিবারের লোকজন জানান, তিনি কলকাতায় গিয়েছেন। পরে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি।