তৈরি: বিক্রির জন্য সাজানো রয়েছে ট্যাপ-কলসি। নিজস্ব চিত্র
গ্রীষ্মের দুপুরে বাড়িতে অতিথি এসেছেন।
হাতে হাতপাখা ধরিয়ে ছায়ায় বসতে দিয়ে গৃহকর্তা হাঁক দিলেন, ‘‘কই রে, কে আছিস। আগে একটু জল-বাতাসা নিয়ে আয়।’’ মুহূর্তে হাজির প্লেটভর্তি বাতাসা আর কাঁসার গেলাসে বরফ-ঠান্ডা জল।
ফ্রিজ দূরের কথা বহু গৃহস্থ বাড়িতে তখনও বিদ্যুৎও আসেনি। চড়ক কিংবা চৈত্র সংক্রান্তির মেলা থেকে সরু মুখের কুঁজো কিংবা একটা প্রমাণ মাপের বড় মুখের কলসি কেনাটা সে সময় প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল। কেউ কেউ আবার কলসির জলে ফেলে দিতেন দু-এক দানা কর্পূর। সুগন্ধি শীতল সে জলের স্বাদই আলাদা। জল আরও ঠান্ডা রাখতে কলসির গায়ে অনেক সময় ভেজা কাপড়ও জড়িয়ে দেওয়া হত।
তার পর বাড়িতে এল বিদ্যুৎ, ফ্রিজ। মাটির কলসি তাই বলে কিন্তু একেবারে হারিয়ে গেল না। বরং নবকলেবরে ফিরে এসে মাত করছে গ্রীষ্মের বাজার। নদিয়ার বেথুয়াডহরি, যুগপুর, করিমপুর, গোয়াস কিংবা মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গিপুর, পিয়ারপুর সম্মতিনগরে দেদার বিকোচ্ছে নতুন চেহারার কলসি।
কুমোরপাড়া জানাচ্ছে, মাঝে মাটির কলসি বিক্রি কমে গিয়েছিল। ক্রেতারাও অভিযোগ জানাতেন, বার বার হাত ডুবিয়ে জল তোলার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। আবার গড়িয়ে জল ঢালতে গিয়ে অনেক সময় ভেঙে যায়।
তারপরেই মাথায় আসে এই নবকলেবরের কথা। মাটির কলসির গায়ে একটা ‘ট্যাপ’ লাগিয়ে দিলে কেমন হয়? যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গোয়াসের বহু দিনের কারিগর সুভাষ পাল জানাচ্ছেন, চলতি মরসুমে তিনি হাজারখানেক ‘ট্যাপ-কলসি’ তৈরি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেই অগ্রহায়ণ মাস থেকে কাজ শুরু করেছিলাম। ইতিমধ্যে সব কলসি খুচরো বিক্রেতাদের ঘরে চলে গিয়েছে।”
খোলা বাজারে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা দামে দেদার বিকোচ্ছে সেই কলসি। জোতকমকল কুমোরপাড়ার সুমন্ত পাল বলছেন, ‘‘গত বছর গঙ্গারামপুর থেকে এক আত্মীয় জোতকমলে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁর কাছেই শিখি আগুনে পোড়ানোর পর কলসিতে ফুটো করে ট্যাপ লাগানোর কৌশল। সেটা করার পরে এখন কলসির বিক্রিও বেড়ে গিয়েছে।’’
পিয়ারপুরের গণেশ দাস, সম্মতিনগরের রহমান শেখেরা বলছেন, ‘‘কলসির গায়ে এই ট্যাপ লাগানোতে খুব সুবিধা হয়েছে। জল নেওয়াও সুবিধা। ভাঙারও ভয় নেই।’’