—প্রতীকী চিত্র।
শীত এলেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে এ ছবি অনেক পুরানো। কিন্তু সীমান্তের চোরাকারবারের পথ নিয়েও যে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক মজুত হতে পারে সেটা কল্পনা করেনি খোদ সীমান্তের বাসিন্দারাও। বোমা ফেটে তিন জনের মৃত্যুতে সে কথা উঠে এসেছে। জলঙ্গির বিধায়ক তৃণমূলের আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল বলছেন, "প্রাথমিক ভাবে যা খবর পাচ্ছি পাচারকারীদের মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই চলছিল। তার জেরেই বোমাা বাধতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।"
কিন্তু হঠাৎ করেই চোরাকারবারিদের পথের দখল নিয়ে এমন লড়াই কেন? সীমান্তের কুয়াশাচ্ছন্ন গাঁয়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিএসএফ এখন সরে গিয়েছে একেবারে সীমান্তের শূন্য লাইন বরাবর, আর তাতেই বদলে গিয়েছে পাচারকারীদের পথের ভৌগোলিক অবস্থান। যে পথ এত দিন সুগম ছিল সেটাই এখন দুর্গম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে। অন্য দিকে যে পথের এত দিন খুব বেশি কদর ছিল না সেই পথেই এখন আদর্শ হয়ে উঠেছে পাচারকারীদের কাছে। আর তার ফলেই এমন লড়াই পাচারের পথ নিয়ে।
সীমান্তের গ্রাম বামনাবাদ এলাকার টিকটিকিপাড়া লাল কূপ ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে মেরে কেটে কিমি ছয়েকের পথ। কিন্তু এত দিন বিএসএফ সীমান্তের শূন্য লাইনে না থেকে এই গ্রামগুলির পাশ দিয়ে টহলদারি করত। ফলে বিশেষ করে শীতের সময় কুয়াশার সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা এই গ্রাম থেকে কোনও ভাবে বেরিয়ে যেতে পারলেই প্রায় কিমি পাচেক ফাঁকা মাঠ একেবারে তাদের দখলে চলে যেত। যেখানে বিএসএফের জওয়ানদের কোনও রকমের টহলদারি ছিল না। আর সেই মাঠেই রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এসে ঘাঁটি গড়ত নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ নেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএসএফ একেবারে সীমান্তে চলে যাওয়ায় ওই এলাকায় বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই গুরুত্ব হারিয়েছে এই পথ।
কিন্তু বীজপাড়া এবং রাজানগর এলাকার পথে একটা নালা থেকে গিয়েছে, যে নালা গ্রামের ভেতর থেকে একেবারে পৌঁছে গিয়েছে সীমান্ত পর্যন্ত। ফলে পাচারকারীদের কাছে সেটাই হয়ে উঠেছে আদর্শ এলাকা। কারণ এই নালা দিয়ে রাতের অন্ধকারে যাতায়াত করলে বিএসএফের পক্ষে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। তা ছাড়া দূর থেকে আলো ফেললে বা নাইট ভিশন ক্যামেরা দিয়ে দেখলেও দেখা যায় না। আর সেই জন্যই এই নতুন করিডরকে ঘিরে দিন কয়েক থেকেই উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল পাচারকারীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। আর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়েই প্রাণ গেল তিন যুবকের। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি পাচারের উন্মুক্ত হয়ে এলাকা হয়ে উঠতে চলেছে ওই সীমান্ত।