মাস শেষ হতে চলল। অনেকেরই অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে ব্যাঙের আধুলি। কিন্তু এটিএম আধুলি দিতে জানে না, তার ট্যাঁকে শুধু দু’হাজারি গোলাপি নোট। ফলে নিজের আধুলিটুকুও তুলতে পারছেন না অনেকেই।
চাকরির কারণে রোজ কলকাতায় যাতায়াত করেন কৃষ্ণনগরের সৈকত মণ্ডল। রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে এটিএমগুলো দেখতে দেখতে যান। টাকা পেলে তুলে নেনে। কিন্তু গত চার দিন ধরে তিনি টাকা তুলতে পারছেন না। কারণ রাতে যখন তিনি এটিএমে যান ততক্ষণে সব একশো টাকার নোট হাওয়া। সৈকত বলেন, “এ মাসে বেশ কয়েকটা বিয়েবাড়ি ছিল। অনেকগুলো টাকা গলেছে। অ্যাকাউন্টে হাজার দুয়েক টাকাও নেই। এই মাসটা কেটে যাবে। কিন্তু টাকাই তো তুলতে পারছি না। বাজার করা, অফিস যাতায়াতও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
পেশায় গৃহশিক্ষক মিলন সরকার পড়েছেন এতই গেরোয়। মঙ্গলবার কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় তাঁর ইন্টারভিউয়ের ডাক ছিল। টাকা হাতে না থাকায় যেতে পারেননি। মিলন বলেন, “দিদি আর বন্ধুদের থেকে চেয়ে ক’দিন চালানো যায়!”
ফরাক্কা কলেজের চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক সমিত মণ্ডলের সেভিংস অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১৮০০ টাকা। তাঁর ছেলে অসুস্থ। ব্যাঙ্কে যাওয়ার সময় পাচ্ছেন না। এটিএম থেকেও টাকা তুলতে পারছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘মাসের শেষ। মাসকাবারি মুদিখানার বাজার করে রেখেছি। নুন-ভাতের অভাব হবে না। কিন্তু ছেলের চিকিৎসার জন্য ওই ১৮০০ টাকাটাই জরুরি। তিনটি ব্যাঙ্কের পাঁচটা এটিএম ঘুরে হয়রান হয়েছি। কিন্তু কোথাও ১০০ টাকার নোট না থাকায় টাকা তুলতে পারিনি। বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হয়েছে।’’
বহরমপুরের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ভবানী মল্লিকের ব্যাঙ্কে রয়েছে ১৯০০ টাকা। তাঁর ছেলের এক বন্ধুর জন্মদিন আজ, বৃহস্পতিবার এবং আর জনের কাল, শুক্রবার। ভবানী বলেন, ‘‘ছেলে জেদ ধরেছে, দুই বন্ধুর জন্মদিনেই যাবে। খালি হাতে তো যাওয়া যায় না। বারবার চেষ্টা করেও একশোর নোট পাইনি। দেখি, কারও কাছ থেকে ধার করতেই হবে। তা ছাড়া উপায় নেই।’’
মজার ব্যাপার, ব্যাঙ্কের কর্তারাও টাকা দিতে না পেরে এখন গ্রাহকদের লোকের কাছে ধার নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। নদিয়ার লিড ম্যানেজার সুগত লাহিড়ি বলেন, “নগদ হাতে না থাকলে কাউকে চেক দিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে পাঠিয়ে কর্মস্থলে যান। তা না হলে আপাতত ঘনিষ্ঠ কারও কাছথ থেকে অল্প টাকা ধার করুন। যে সব এটিএম কাউন্টারে টাকা জমা দেওয়ার মেশিন আছে সেখানে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে ধার করা টাকা জমা দিয়ে দু’হাজারের নোটে তুলে নিন। তাতে আপনি আপনার টাকাও পেয়ে গেলেন আবার যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তার টাকাও ফেরত দিতে পারবেন।”
নগদের কী কারবার!