আর্থিক তছরুপে ধৃত বিড়ি ঠিকাদার

আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে এক বিড়ি মুন্সিকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতের নাম আকবর আলি। তাঁর বাড়ি সুতির মধুপুর গ্রামে। অভিযোগ, আকবর-সহ বেশ কয়েকজন জঙ্গিপুরের আঞ্চলিক কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর থেকে দফায় দফায় প্রায় দেড় কোটি টাকা জালিয়াতি করেছেন। বৃহস্পতিবার আকবরকে জঙ্গিপুরের এসিজেএম মনোজিৎ সরকারের এজলাসে তোলা হলে বিচারক তাঁকে একদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩
Share:

আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃত আকবরকে।— নিজস্ব চিত্র।

আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে এক বিড়ি মুন্সিকে গ্রেফতার করল সিআইডি। ধৃতের নাম আকবর আলি। তাঁর বাড়ি সুতির মধুপুর গ্রামে। অভিযোগ, আকবর-সহ বেশ কয়েকজন জঙ্গিপুরের আঞ্চলিক কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতর থেকে দফায় দফায় প্রায় দেড় কোটি টাকা জালিয়াতি করেছেন।
বৃহস্পতিবার আকবরকে জঙ্গিপুরের এসিজেএম মনোজিৎ সরকারের এজলাসে তোলা হলে বিচারক তাঁকে একদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘শুক্রবার ধৃতকে ফের আদালতে নিয়ে এসে তাঁর গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে।’’
অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিপুরের ওই আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অফিসে এমন আর্থিক জালিয়াতি চলছে। দু’জন পিএফ কমিশনার রঘুনাথগঞ্জ থানায় গত দু’বছরে চারটি এফআইআরও দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিশ সেই ঘটনার কিনারা করতে পারেনি বলে অভিযোগ। তারপরেই চলতি বছরের মে মাসে দু’টি মামলার তদন্তভার নেয় সিআইডি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মধুপুর গ্রাম থেকে আকবর আলিকে গ্রেফতার করে তারা।

Advertisement

সিআইডি সূত্রে খবর, ধৃত আকবর ছাড়াও পিএফ অফিসের আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজনেরও যোগ রয়েছে। আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জালিয়াতিতে জড়িত জঙ্গিপুর পিএফ দফতরের একাধিক কর্মীর নাম জানা গিয়েছে। সিআইডির এক কর্তা জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকবরের মধুপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথিপত্রও আটক করা হয়েছে। তাঁর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে কায়দায় এই আর্থিক জালিয়াতি চলছিল তা জানতে পেরে চমকে গিয়েছেন সিআইডির তদন্তকারী আধিকারিকেরা।

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুরে প্রায় ৬ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক আছে। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের অধীন জঙ্গিপুরের ওই পিএফ অফিস থেকে বিড়ি শ্রমিকদের পেনসন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা মেটানো হয়। শতাধিক কর্মীর পাশাপাশি ওই অফিসে রয়েছেন খোদ পিএফ কমিশনার-সহ একাধিক সহকারি পিএফ কমিশনার। তাহলে কী ভাবে চলত এই জালিয়াতি?

Advertisement

সিআইডির তদন্তকারী আধিকারিক অজিতবাবু জানান, ওই পিএফ অফিস থেকে বিড়ি শ্রমিকের নামে পেনসন ও পিএফের টাকা অ্যাকাউন্টপেয়ী চেক কেটে তা সরাসরি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সে টাকা ব্যাঙ্কে সরাসরি জমা পড়ত বিড়ি শ্রমিকের ওই নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টেই। পরে সেই বিড়ি শ্রমিকের কাছে দালাল পাঠিয়ে বলা হত ভুল করে তার (বিড়ি শ্রমিকের) অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা জমা পড়ে গিয়েছে। তাকে দিয়ে সই করিয়ে হয় নগদে সেই বাড়তি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেওয়া হত কিংবা চক্রে জড়িত কারও অ্যাকাউন্টে সে টাকা জমা করে নেওয়া হত। অজিতবাবু বলেন, ‘‘এই চক্রে জড়িত তিন জনের নামও ধৃত আকবর আমাদের জানিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।’’

জঙ্গিপুরের ওই আঞ্চলিক পিএফ অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিক জালিয়াতির ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। বিড়ি শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের দরুণ প্রাপ্য মেটাতে ৪৩টি অ্যাকাউন্টপেয়ী চেক ইস্যু করা হয় ওই অফিস থেকে। ৪৩ জন বিড়ি শ্রমিক অরঙ্গাবাদ ও নিমতিতার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সে টাকা তুলেও নেন। ওই দুই ব্যাঙ্ক থেকে পিএফ অফিসে যে মাসিক আর্থিক স্টেটমেন্ট পাঠানো হয় তা দেখেই চোখ কপালে ওঠে তৎকালীন পিএফ কমিশনার ঋতুরাজ মেধির। দেখা যায়, ওই ৪৩টি চেকে যেখানে মাত্র লাখ দুয়েক টাকা খরচ হওয়ার কথা সেখানে অফিসের সরকারি ফান্ড থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৪১ লক্ষ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা।

এরপরেই পি এফ কমিশনার নিজেই ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল রঘুনাথগঞ্জ থানায় প্রথম এফআইআর রুজু করেন। সেই সঙ্গে শুরু হয় বিভাগীয় তদন্তও। দেখা যায়, শুধু ওই ৪১ লক্ষ টাকাই নয়, এ পর্যন্ত দফায় দফায় একই ভাবে জালিয়াতি করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চেকপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন বিড়ি শ্রমিক জঙ্গিপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই উঠে আসে আকবরের নাম। এরপরেই তাঁকে সিআইডি গ্রেফতার করে।

জঙ্গিপুরের ওই আঞ্চলিক কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড দফতরের সহকারি পিএফ কমিশনার প্রদীপকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অফিসের কিছু কর্মী বিড়ি শ্রমিকদের চেকে প্রাপ্যর চেয়ে বাড়তি টাকা লিখে দালালের মাধ্যমে সে টাকা গায়েব করেছেন। সমস্ত বিষয়টি ডাইরেক্টর জেনারেল অফ অডিটের রিপোর্টে ধরাও পড়েছে। সবমিলিয়ে দফায় দফায় প্রায় দেড় কোটি টাকা তছরূপ করা হয়েছে। বহিরাগত চক্র জড়িত থাকলেও অফিসের কর্মীদের যোগ ছাড়া এত বড় জালিয়াতি করা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, পুলিশ ও সিআইডির তদন্তের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অফিসের তিন কর্মীকেও সাসপেন্ড করা হয়।

বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে হাজির ছিলেন আকবর আলির বাবা সাদাকাশ শেখ। তিনি বলেন, ‘‘জালিয়াতির সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অফিসেরই কয়েকজন কর্মী। আমার ছেলে না জেনে ফেঁসে গিয়েছে। অবিলম্বে দোষী কর্মীদের ধরুক সিআইডি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement