বিগ্রহের পাতে বড়দিনের কেক

শুধু মহাপ্রভু মন্দির বলে নয়, বড়দিনে নবদ্বীপের বেশির ভাগ মঠমন্দিরে সন্ধ্যারতির পরে কেক ভোগ দেওয়া ক্রমশ নিয়ম হয়ে উঠছে।

Advertisement

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

নবদ্বীপ ও বেলডাঙা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৯
Share:

বড়দিনের সন্ধ্যা। নবদ্বীপের ধামেশ্বর মহাপ্রভু সন্ধ্যারতি শেষ হয়েছে। এ বার ভোগ নিবেদনের পালা। অনান্য দিনে এই সময়ে ছানা, মিষ্টি, সন্দেশের ভোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর বলে কথা! ফলে দেবতার ভোগেও এ দিন বরাদ্দ কেক। শুধু মহাপ্রভু মন্দির বলে নয়, বড়দিনে নবদ্বীপের বেশির ভাগ মঠমন্দিরে সন্ধ্যারতির পরে কেক ভোগ দেওয়া ক্রমশ নিয়ম হয়ে উঠছে। নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুরে মহাপ্রভুর জন্মস্থান মন্দির থেকে মদনমোহন মন্দির, বলদেব মন্দির, হরিসভা— সর্বত্রই ছবিটা একই রকম।

Advertisement

নবদ্বীপের প্রবীণ গোস্বামীরা জানাচ্ছেন, এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে বড়দিনে দেবতাকে কেক দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছে। প্রবীণদের অনেকেই মনে করেন, গঙ্গার পূর্বপাড়ে মায়াপুরে সাহেবরা ইস্কন মন্দির তৈরি করার পর থেকেই সম্ভবত বড়দিনে দেবতার ভোগে কেক দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “মায়াপুরে ইস্কনের নিজস্ব বেকারিতে বিদেশি ভক্তেরাই কেক তৈরি করেন। নানা রকম ফ্রুট কেক, স্ট্রবেরি কেক, চকোলেট কেক বড়দিনের সময় বেশি করে তৈরি করা হয়। দর্শনার্থীরাও এই কেক প্রসাদ হিসেবে পছন্দ করেন।’’

সেই সাগর পাড়ের হাওয়াই সম্ভবত গঙ্গা পার হয়ে পশ্চিম তীরে নবদ্বীপকে প্রভাবিত করেছে। নবদ্বীপের বৈষ্ণব মঠমন্দিরে ভক্ত নিজে যেমন জীবনযাপন করেন, তাঁর আরাধ্য দেবতাকেও সে ভাবেই পূজার্চনা করেন। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের সম্পাদক অদ্বৈতদাস বাবাজি বলেন, “আত্মবৎ সেবার অর্থই তাই। ভক্ত বড়দিনে কেক খেলে সেটাও ইষ্ট দেবতাকে নিবেদন করে খাবে।”

Advertisement

বলদেব মন্দিরের কিশোর গোস্বামী এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বড়দিন উপলক্ষে দেবতার জন্য রকমারি কেক তৈরি করেন ভক্তরা। ময়দা, সুজি, কাজু-কিসমিস, নানা রকমের ফলের ফ্রুটকেক যেমন বাড়িতে তৈরি করেন ভক্তরা, তেমনই দোকান থেকে কিনে আনেন ছানা বা বিভিন্ন মিষ্টির কেক। তাঁর কথায়, “শুধু বড়দিন বলে নয়, ঝুলন পূর্ণিমায় বলদেবের জন্মতিথিতেও কেক দেওয়া হয়।”

চাহিদা বাড়ছে। তাই নবদ্বীপে নানা রকমের নিরামিশ কেক এবং ছানার কেকের বাজারও এখন জমে উঠেছে। শহরের প্রায় সব মিষ্টির দোকানে এই সময় ছানা বা ক্ষীরের কেক পাওয়া যায়। স্থানীয় ইতিহাস বলছে, নবদ্বীপে প্রথম ছানার কেক তৈরি করেন প্রয়াত মিষ্টান্নশিল্পী শিবু সেন। তখনও মায়াপুরে ইস্কন গড়ে ওঠেনি। নিজের খেয়ালেই ছানার কেক তৈরি করেন শিবু সেন। নবদ্বীপে মন্দিরে সেটাই প্রথম বড়দিনের কেক।

রবিবার রাতে বেলডাঙার সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মন্দিরেও যিশুর ছবি রেখে সেখানে নানা রকম ভোগ সাজিয়ে পুজো করা হয়েছে। ভোগে কেক, বিস্কুট, ফলের রস-সহ নানা রকম ফলও ছিল। সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী বিশ্বময়ানন্দ জানান, এই দিনে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরুভাইদেরদের নিয়ে হুগলির আটপুরে যিশুর আরাধনা করেন। তার পর থেকেই যিশু পুজো শুরু হয়। অনান্য দেবদেবীর মতো যিশুকেও সে দিন বিশেষ আরাধনা করা হয়ে থাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement