মুর্শিদাবাদে রাতে পুলিশের টহলদারি। —নিজস্ব চিত্র।
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদ এবং তৎপরবর্তী অশান্তিতে এখনও থমথমে মুর্শিদাবাদ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শনিবার রাত থেকে জেলার বেশ কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাতভর তারা সুতি, শমসেরগঞ্জ থানা এলাকায় টহল দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরেছে পুলিশও। রাতভর তল্লাশি অভিযানে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। রবিবার সকাল থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ যৌথ রুটমার্চের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুর্শিদাবাদের স্পর্শকাতর এলাকায়। রয়েছে সব সংগঠনকে নিয়ে শান্তি বৈঠকের ভাবনা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত জঙ্গিপুর পুলিশ জেলায় হিংসার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে এখনও পর্যন্ত মোট গ্রেফতারির সংখ্যা ১৩৮।
শমসেরগঞ্জ এবং সুতির মোট ন’টি স্পর্শকাতর এলাকায় শনিবার রাত ৯টা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। অশান্তির আশঙ্কায় রাতে বাড়তি বাহিনীও আনা হয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা কথা বলেছেন। তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় পুলিশও। স্থির হয়েছে, রবিবার সকাল ৯টা থেকে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী অশান্তি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে যৌথ ভাবে রুটমার্চ করবে। এলাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে।
সকাল থেকে থমথমে মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ এলাকা। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় লোকজনও বেরিয়েছেন খুব কম। ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ধুলিয়ান এবং সুতি স্টেশনে বাড়তি রেল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কলকাতার রুটে সরকারি বাস চলাচল করছে। তবে তা-ও সংখ্যায় বেশ কম। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগরক্ষাকারী জাতীয় সড়কেও আধাসেনা মোতায়েন রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা রাতেই গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন। মন্দির কমিটি, স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাব এবং গ্রামের মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন তাঁরা। তাঁদের ভরসা জুগিয়ে গ্রাম না-ছাড়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে সমগ্র জেলাটিকে। মুর্শিদাবাদে প্রবেশের মূল দুই পথ হল নদিয়ার সীমান্ত এবং মালদহ থেকে গঙ্গার পথ। এই দুই জায়গাতে রাত থেকে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। কোনও অবস্থাতেই বহিরাগতেরা জেলায় প্রবেশ করে যাতে অশান্তি সৃষ্টি করতে না-পারেন, তা নিশ্চিত করতে চায় প্রশাসন। দুই প্রবেশপথে ‘মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে নজরদারি চলছে। যাঁরা জেলায় প্রবেশ করতে চান, তাঁদের ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বহিরাগতের প্রবেশ ঠেকাতে গঙ্গায় নজরদারিতেও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে।
সুতি থানা এলাকায় রবিবার সকালে ‘ওয়াকফ বিরোধী একতা মঞ্চ’-এর দু’টি পৃথক প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল। আপাতত পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচিগুলি বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলতে চায় প্রশাসন। তাঁদের নিয়েই সুতি থানায় শান্তি বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদে এসেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। বিএসএফের সঙ্গেও হয় বৈঠক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজিপি রাজীবের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন। এ ছাড়া, এডিজি সিদ্ধি নাথ, বিনীত গোয়েলরা মুর্শিদাবাদে রয়েছেন। আরও পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ঝাড়খণ্ড থেকে মুর্শিদাবাদে আসছে।
অশান্তির আশঙ্কায় এলাকায় আতঙ্ক রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। বাড়ির সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভয়ে আমার পরিবারের লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু যা হওয়ার হোক, আমি একাই বাড়িতে থাকব।’’