রানাঘাট কনভেন্ট কাণ্ডের আঁচ এ বার দিল্লিতে।
আজ বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব হয়েছে বাম ও তৃণমূল, উভয় পক্ষই। অন্য দিকে রাজ্যের অস্বস্তি বাড়িয়ে নবান্নের কাছ থেকে ওই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। বিশেষ করে কেন ওই কনভেন্ট স্কুলটির সত্তরোর্ধ্ব সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করা হল তার ব্যাখ্যা রাজ্য সরকারের কাছে চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে, ওই স্কুলটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ছিল কিনা এবং ভবিষ্যতে এ ধাঁচের ঘটনা রোখার জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। একই সঙ্গে ওই এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্য সরকারকে বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
ধর্ষণের পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন। সিসিটিভিতে ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও এখনও অভিযুক্তদের ধরতে ব্যর্থ রাজ্য পুলিশ। যে কারণে আজ রানাঘাট গিয়ে স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। সিবিআই তদন্তের দাবিও জানায় জনতা। সিসিটিভিতে ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য অপরাধীদের ধরতে না পারায় অবাক কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “আমরা অবাক। সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট ভাবে দুষ্কৃতীদের মুখ দেখা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য পুলিশ।” বিষয়টিকে রাজ্য প্রশাসনের গাফিলতি হিসেবেই ব্যাখ্যা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে কেন্দ্র।
আজ সংসদে রানাঘাট কাণ্ড নিয়ে সরব হন বাম সাংসদেরা। রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে বিষয়টি তোলেন সিপিআই সাংসদ ডি রাজা। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় দক্ষিণপন্থী উগ্র সংগঠনগুলির আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় খ্রিস্টানদের উপরে হামলার ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। একই যুক্তি দেখিয়ে সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সুখেন্দুশেখর রায়েরা। গত ডিসেম্বর মাস থেকেই দেশে একাধিক গির্জা ও খ্রিস্টান স্কুলে হামলার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছিল। যার অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি শাসনে থাকা দিল্লিতে। ফলে সে সব হামলার যাবতীয় দায় এসে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘাড়ে।
ডেরেক অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গে পুর নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার পিছনেও বিজেপির হাত রয়েছে। তিনি বলেন, “এর আগে দিল্লিতেও নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা হয়েছিল। এখন পুর ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গেও তা শুরু হতে যাচ্ছে বলেই আমাদের আশঙ্কা।” ডেরেকের অভিযোগ, যে ভাবে ঘটনার পর থেকে এলাকায় সুপরিকল্পিত ভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা থেকে বোঝা যায় এর পিছনে একটি নকশা রয়েছে। বিজেপি এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে।
গোটা ঘটনার দায় বিজেপির ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে মুখ খোলেন সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মোক্তার আব্বাস নকভি। আইন-শৃঙ্খলা যেহেতু রাজ্যের বিষয়, তাই রানাঘাট কাণ্ডের দায় রাজ্যের উপরেই চাপিয়ে নকভি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা রুখতে রাজ্যগুলিকেই কড়া হতে হবে।”
পরে ভারত ও অন্য দেশে খ্রিস্টানদের উপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত প্রার্থনাসভায় যোগ দেন ডেরেক। সেখানেও তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার পিছনে নির্দিষ্ট নকশা দেখা যাচ্ছে। ধর্মস্থানে হামলার পরে প্রযুক্তির সাহায্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।” ভোটের আগেই রানাঘাটের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন ডেরেক। এই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার কড়া পদক্ষেপ করছে বলে দাবি করেন তিনি।