প্রতীকী ছবি।
ভাদ্রের জোৎস্না রাত। পদ্মায় সে দিন তেমন মাছের দেখা না পেয়ে ফিরে আসছিলেন ভদ্রেশ্বর মণ্ডল। পাড়ে নৌকা বেঁধে উপরে উঠতেই দু'জন এসে জাপটে ধরল তাঁকে। কিছু বলার আগেই দু’জনে মাথায় করে তুলে একেবারে সোজা নৌকায় এনে ফেলল ভাদু মণ্ডলকে। ভাদু বলছেন, ‘‘মিনিট খানেকের মধ্যেই দেখলাম গোটা দশেক গরু নিয়ে আরও ৩ জন ঝড়ের গতিতে উঠে এল নৌকায়। জ্যোৎস্না, পরিষ্কার দেখতে পেলাম কোমরে গোঁজা পিস্তল বের করে এক জন আমার কপালে ধরল। বলল, ‘তাড়াতাড়ি চালা, না হলে খুলি উড়িয়ে দেব!’’নৌকা কিছু দূর এগোতেই দিনের আলোর মতো সার্চ লাইট এসে পড়ল নৌকার ছইয়ে। তার পর শুরু হল গুলির বৃষ্টি। এক দিকে পাড় থেকে বিএসএফের পক্ষ থেকে চলছে গুলি, উল্টোদিকে নৌকা থেকেও পাল্টা উত্তর ছুটছে। বলছেন, ‘‘গরু গুলোকে আড়াল করে কোনওক্রমে শুয়ে শুয়ে হাল বাইছি প্রাণনপনে। কানের পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গুলি। দুটো গরু সম্ভবত গুলি খেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পদ্মায়। মিনিট পনেরো পরে গুলি বন্ধ হল। আরও আধ ঘণ্টা পরে ও পাড়ে ঘাটে ভিড়ল নৌকা। ভাদু বলছেন, পাচারকারীদের নামিয়ে দেওয়ার সময় দেখলাম একজনকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। নৌকার পাটাতন তখন রক্তে ভাসা ভাসি। মনে মনে বললাম, এও দেখতে হল!’’ সীমান্তের পদ্মায় ধীবরদের অভিজ্ঞতার অন্ত নেই। পাচারকারী থেকে জল-ডাকাত— অত্যাচার সইতে হয়নি এমন লোক কম। বিশেষ করে ভরা পদ্মায় এ পার ও পার করে দেওয়ার সময় অনেক সময়ই তাদের জুলুমের শিকার এই ধীবরেরা। কখনও ধমকে কখনও মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে পার করে নেওয়া গবাদি পশু থেকে কাশির সিরাপ, বছর কয়েক আগেও ছিল নিত্য ঘটনা।
মৎস্যজীবী সুকুমার হালদার বলছেন, ‘‘তখন রাতের পদ্মায় যেমন ছিল মাছের আনাগোনা তেমনই ছিল জলদস্যু থেকে বাংলাদেশের ডাকাত আর পাচারকারীদের দাপট। মাঝেমাঝেই তাদের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হতাম পাচারকারী-সহ পাচারের সামগ্রী ও পারে পৌঁছে দিতে হত। না হলেই কপালে উঠে আসত পিস্তল।’’
আঁধার পদ্মার সেই সব অনন্ত অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে তবুও ভেসে থাকেন ওঁরা। আর নদী বয়ে চলে আপন খেয়ালে।