Plastic Pollution

প্রশাসক বদল, ধুঁকছে প্লাস্টিক ধরার অভিযান

বহু চেষ্টায় নিজের পরিবেশকে প্লাস্টিকের দূষণহীন করার কাজে অনেক দূর এগিয়েছিল কৃষ্ণনগর। কিন্তু পুরসভার প্রশাসকের পদে থাকা আগের মহকুমাশাসক বদলি হয়ে যেতেই নজরদারি ঢিলে হয়ে গিয়েছে বলে শহরবাসীর একাংশের আক্ষেপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২০ ০৬:০৭
Share:

শুধু পরিবেশ কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

ক্রমশই যেন ঝিমিয়ে পড়ছে কৃষ্ণনগরে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বিরুদ্ধে অভিযান। প্রথম থেকে এই অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ‘কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু’র সদস্যেরা নিজেদের মতো করে অভিযান চালালেও তা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। কারণ তাঁদের সঙ্গে পুরসভার কোনও কর্মী থাকছেন না যিনি দরকারে জরিমানা করতে পারেন।

Advertisement

বহু চেষ্টায় নিজের পরিবেশকে প্লাস্টিকের দূষণহীন করার কাজে অনেক দূর এগিয়েছিল কৃষ্ণনগর। কিন্তু পুরসভার প্রশাসকের পদে থাকা আগের মহকুমাশাসক বদলি হয়ে যেতেই নজরদারি ঢিলে হয়ে গিয়েছে বলে শহরবাসীর একাংশের আক্ষেপ। সেই সুযোগে গুটি-গুটি পায়ে শহরে ফিরে আসতে শুরু করেছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। যদিও পুরসভা কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ।

গত বছর ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরকে প্লাস্টিকমুক্ত করার অভিযান। তৎকালীন কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক সৌমেন দত্তের নেতৃত্ব পাত্রবাজারে অভিযান শুরু করেছিলেন পুরসভার কর্মী ও ‘পরিবেশ বন্ধু’র সদস্যেরা। তার আগে ১২ সেপ্টেম্বর নাগরিক কনভেনশন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে অভিযানের আগে টানা প্রচার করা হবে। সেই মতো নানা ভাবে শহরে প্রচার চালানো হয়। ২ অক্টোবর, গাঁধী জয়ন্তীর দিন পাত্রবাজারে মাইক প্রচার করে মহকুমাশাসক নিজেই শহরকে প্লাস্টিকমুক্ত করার জন্য অভিযান চালানোর কথা ঘোষণা করেন।

Advertisement

কথা মতোই কাজ এগোচ্ছিল। প্রথম দিকে বাজারগুলির পাশাপাশি ছোট-বড় দোকানে অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ও থার্মোকলের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার পরে শুরু হয় জরিমানা করা। মহকুমাশাসক নিজে তার নেতৃত্ব দিতে থাকেন। বিভিন্ন বাজার, বড়দিনের মেলা, সরকারি হস্তশিল্প মেলাতেও তিনি ক্রেতা সেজে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করতে থাকেন। তাঁর সঙ্গে সমান উৎসাহে যোগ দেন পুরসভার কর্মী ও ‘পরিবেশ বন্ধু’র সদস্যেরা।

কিন্তু ছবিটা পাল্টাতে শুরু কছু দিন আগে সৌমেন দত্ত বদলি হয়ে যাওয়া ইস্তক। তাঁর পরিবর্তে মহকুমাশাসক হয়ে আসেন মণীশ বর্মা। সৌমেনবাবু বর্তমানে জেলা পরিষদের সচিব পদে কর্মরত। দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরেও দু’এক দিন তাঁকে অভিযানে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শহরবাসীর একটা বড় অংশের মতে, বর্তমানে প্লাটিক বিরোধী অভিযানে প্রশাসনের সক্রিয় নেতৃত্বের অভাবটা খুব স্পষ্ট। পুরসভার কর্মীরা রাস্তায় না নামায় অভিযান নখদন্তহীন হয়ে যাচ্ছে।

‘কৃষ্ণনগর পরিবেশ বন্ধু’র সম্পাদক ইনাসউদ্দিন বলেন, “আমরা প্রতি রবিবার অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু পুরসভার কর্মীরা সঙ্গে না থাকায় জরিমানা করতে পারছি না। তাতে মানুষের মন থেকে ভয় কেটে যাচ্ছে।” তিনি জানান, আগের রবিবার তাঁরা পাত্রবাজারে চার জনকে হাতে-নাতে ধরেও জরিমানা করতে পারেননি। এই রবিবারও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কয়েক জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। কিন্তু জরিমানা করা যায়নি। ইনাসের আক্ষেপ, “অনেকে ভয় পাওয়ার বদলে হাসাহাসি করছেন। সৌমেনবাবু যে সব অভিযানে থাকতেন, সে সব ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নেওয়া যেত। কিন্তু বাকি অভিযানগুলিতে সে ভাবে পুরসভার কর্মীদের আমরা পাইনি।”

এই পরিস্থিতিতে স্পষ্টতই হতাশ হয়ে পড়ছেন পরিবেশ কর্মীরা। আর, যে ব্যবসায়ীরা এর আগে প্লাস্টিক ও থার্মোকল গুটিয়ে ফেলেছিলেন, তাঁরা আবার অকুতোভয় হয়ে উঠছেন। ইনাসউদ্দিন বলেন, “আমরা বর্তমান মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, প্রশাসন আবার জরিমানা করতে পছে নামবে।”

মহকুমাশাসক মণীশ বর্মা অবশ্য দাবি করেন, “আমাদের কর্মীরা সপ্তাহে এক দিন করে অভিযানে বের হচ্ছেন। যথেষ্ট সংখ্যক জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সংগঠন যে দিন চাইবে, সে দিনই তো বেরনো সম্ভব নয়! পুরকর্মীদের অনেক কাজ থাকে।” গত রবিবার সমন্বয় কর্মসূচি এবং এ দিন বেওয়ারিশ লাশ পোড়ানো নিয়ে জটিলতার কারণে পুরকর্মীরা প্লাস্টিক অভিযানে বেরোতে পারেননি জানিয়ে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমরা গোটা বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” প্রাক্তন মহকুমাশাসক সৌমেন দত্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement