‘আইন আতঙ্কে’ মৃত দুই, দাবি

শনিবার দুপুরে আজাহার শেখের ছেলে মাজিল শেখ বলেন, ‘‘বাবা আতঙ্কে  নথিপত্র খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু ঘরে কাগজপত্র ঘেঁটে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাননি। এর পরে ডাকঘর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, বিডিও অফিসে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। কিন্তু নথিপত্র জোগাড় করতে না পারায় ভেঙে পড়েছিলেন।’’

Advertisement

ইন্দ্রাশিস বাগচী

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৭
Share:

শোকস্তব্ধ। বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

অসমের এনআরসি-র আঁচ লেগেছিল আগেই। এ বার এনআরসি-র পাশাপাশি শুরু হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কও। বৃহস্পতিবার ফুলশহরীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন কুদরত শেখ (৫৭)। তাঁর পরিবারের দাবি, নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কেই মারা গিয়েছেন ওই প্রৌঢ়। সেই তালিকায় এ বার জুড়ে গেল বহরমপুরের হাতিনগরও।
আজাহার শেখ (৬৯) ও নুজুরা বিবির (৪৮) পরিবারের দাবি, দু’জনেরই মৃত্য হয়েছে এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন আতঙ্কে। শনিবার দুপুরে আজাহার শেখের ছেলে মাজিল শেখ বলেন, ‘‘বাবা আতঙ্কে নথিপত্র খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু ঘরে কাগজপত্র ঘেঁটে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাননি। এর পরে ডাকঘর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, বিডিও অফিসে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। কিন্তু নথিপত্র জোগাড় করতে না পারায় ভেঙে পড়েছিলেন।’’
মাজিলের দাবি, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে শুক্রবার বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হয়েছে। টিভিতে সেই অশান্তির খবরও বাবা দেখেন। শনিবার সকাল থেকে গোটা বাড়ি তন্নতন্ন করে নথিপত্রের খোঁজ শুরু করেন। কিন্তু সব নথিপত্র পাননি। এ দিন দুপুরে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বাবা মারা যান। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কেই বাবার
মৃত্যু হয়েছে।’’

Advertisement

ঘড়ির কাঁটায়

Advertisement

•সকাল ৮ টা: রেলপথে অবরোধ শুরু সাগরদিঘির পোড়াডাঙা স্টেশনে। জঙ্গিপুর স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল কলকাতাগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস।

•১০ থেকে ১১ টা: সুতির সাজুর মোড় ও শমসেরগঞ্জের ডাকবাংলো মোড়ে অবরোধ শুরু। আগুন লাগানো হল ৪টি
সরকারি বাসে।

•১১টা: বেলডাঙা রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা দমকলের গাড়িতে আগুন দিল বিক্ষোভকারীরা।
১১ টার পরে বেলডাঙা বাজারের অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে গেল।

•১১টা: হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয় ইসলামপুর বাজারে। শুরু হয় বিক্ষোভ। রাজ্য সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে চলে স্লোগান। আটকে পড়ে যানবাহন।

•দুপুর ১২টা: ভাঙচুর নিমতিতা ও ধুলিয়ান রেল স্টেশনে।

•১টা: শমসেরগঞ্জ থানায় ভাঙচুর।

•১:৩০: রানিনগরের তৃণমূল নেতা আমিনুল হাসানের বাড়িতে চড়াও হল আন্দোলনকারীদের একাংশ। পুড়িয়ে দেওয়া হল দু’টি গাড়ি, দু’টি মোটরবাইক।

•২.৩০: সুতির টোল প্লাজায় ভাঙচুর করে আগুন লাগানো হয়।

•বিকেল ৩টে: হরিহরপাড়ায় নাগরিক কল্যাণ পরিষদের প্রতিবাদ সভা।

•৩.৩০: সারগাছি মোড়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ।

•৪টে: হরিহরপাড়া হাসপাতাল মোড়ে হরিহরপাড়া-বহরমপুর রাজ্যসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ।

•৪টে: আহিরণ সেতুতে রাস্তা তৈরির কাজ করা একাধিক গাড়িতে আগুন লাগানো হল।

•৪টে: বিক্ষোভ শুরু হয় লালগোলায়। লালগোলা জঙ্গিপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে।

•৪.১৫: লালগোলার কৃষ্ণপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি ট্রেনে আগুন দিয়ে ভাঙচুর স্টেশনে।

•৪.৩০: বিক্ষোভকারীরা আগুন লাগিয়ে দিল লালগোলা স্টেশনে।

•৪:৪০: জলঙ্গির সাগরপাড়ায় এনআরসি বিরোধী মিছিলের সামনে এসে পড়ে পুলিশের গাড়ি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শুরু হয় বচসা। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর।

•সন্ধ্যা ৫ টা: হরিহরপাড়ার মামুদপুর ও স্বরূপপুরে প্রতিবাদ মিছিল।

•৫ টা: সারগাছি স্টেশন ভাঙচুর।

• ৫.৩০: বিক্ষোভকারীরা আগুন লাগিয়ে দিল নিমতিতা স্টেশনে।

•৫.৩০: জঙ্গিপুর রোড স্টেশনে ভাঙচুর। ফেরার পথে মিঞাপুরের সেতুর কাছে একটি লালগোলাগামী সরকারি বাসে ভাঙচুর।

•রাত ৮টা: লালগোলার কৃষ্ণপুর স্টেশনে লালবাগ থেকে দু’টি দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছয়। একই সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ।

আজাহারের পড়শি নুজুরা বিবির নথিপত্রও ঠিক ছিল না। নুজুরার দেওর কামাল হোসেন বলছেন, ‘‘এনআরসির কথা শোনার পর থেকে ভাবি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। মাঝে মাঝে বলত, ‘এ বার বোধহয় আমাদের দেশ ছাড়তে হবে।’ কাগজপত্র ঠিক করার জন্য পোস্ট অফিস থেকে ইন্টারনেটের দোকান হন্যে হয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। আতঙ্কেই শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল ভাবি।’’
আজাহারের ছেলে মাজিল শেখ বলেন, ‘‘এ দিন সকাল থেকেই বাড়ির কাগজপত্র হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তা খুঁজে না পেয়ে চিন্তায় মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে পড়ছিল। দুপুরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয়।’’ আজাহারের স্ত্রী রৌশন বিবি বলেন, ‘‘ এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইনই কাল হয়ে দাঁড়াল।’’
নুজুরা বিবির পরিবারের দাবি, বেশ কিছুদিন থেকেই এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন আতঙ্কে ঘুম ছুটেছিল তাঁর। শনিবার সকাল থেকেই বাড়ির প্রয়োজনীয় নথিপত্র খোঁজাখুজি শুরু করেন। এরপরেই স্ট্রোক হয়। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
হাতিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কবিতা সরকার ঘটনার খবর পেয়ে ওই দু’জনেরই বাড়িতে গিয়েছিলেন। শনিবার রাতে প্রধান বলছেন, ‘‘মৃতদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। গ্রামের বাসিন্দাদের সচেতন করে‌ছি। মুখ্যমন্ত্রীর সচেতনতামূলক ভিডিয়োবার্তাও তাঁদের দেখিয়েছে।’’ বহরমপুরের বিডিও অভিনন্দন ঘোষ বলছেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্কে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। কী ঘটনা ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement