নিহত অনিল বিশ্বাসের শোকার্ত মা ও স্ত্রী। ছবি: প্রণব দেবনাথ
পনেরো বছরের বেশি ধরে গাছে ওষুধ দেওয়ার কাজ করছি। বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। আগে কখনও সমস্যা হয়নি। সে দিন যা ঘটল, তা ভাবতেও পারিনি।
ভোর থাকতে উঠে সকাল-সকাল আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম আমরা পাঁচ জন। কাজ শেষ করে দুপুর বা বিকেলে ফিরব। শান্তিপুরে নৃসিংহপুর ঘাট পেরোই, তার পর কালনা স্টেশনে চা খেয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরি।
খানিকটা যেতেই কয়েক জন এসে আমাদের পথ আটকাল। কেউ বলতে লাগল, আমরা জঙ্গি। কেউ বলছে, ছেলেধরা। যত সময় যাচ্ছে, চারপাশে ভিড় বাড়ছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে অন্তত শ’খানেক লোক জড়ো হয়ে গেল। মরিয়া হয়ে আমরা ওদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, পরিচয়পত্র দেখাচ্ছি। সে সব ওরা ছিঁড়ে ফেলে দিল। বললাম, ‘আমাদের সন্দেহ হলে পুলিশের হাতে তুলে দিন’। কেউ শুনল না।
ভিড়ের মধ্যে থেকে নানা জনে নানা কথা বলছে। ব্যাপারটা যে খুব খারাপ দিকে যাচ্ছ, আমরা বুঝতে পারছি। জনতা ক্রমশ রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে। খুব ভয় লাগতে শুরু করল। এরই মধ্যে টোটোয় চেপে একটা ছেলে এল, শুনলাম তার নাম নাসরন। ‘জঙ্গি’ বলে সে-ই প্রথম আমাদের উপরে চড়াও হয়। তা দেখে বাকিরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে। মার খেয়ে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। কিন্তু ওরা লাথি-ঘুষি মেরেই চলেছে। চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে যারা দেখছে তারাও কেউ ঠেকাতে আসেনি।
মারের চোটে এক সময়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। জ্ঞান ফেরার পরে শুনি, আমাদের এক জন মারা গিয়েছে। আমরা চার জন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছি। আমার বাঁ কান কেটে গিয়েছে। ডান পায়ে মারাত্মক চোট।
আজ বারবার এক মহিলার কথা মনে পড়ছে। নাম যদ্দুর মনে পড়ে, মিনতি হালদার। কী ভয়ঙ্কর ব্যবহার তার! আমাদের মার খাওয়ানোর জন্য তারই বড় ভূমিকা ছিল। তা-ও ভাল যে ১২ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ওদের চরম শাস্তি চাইছি। আমরা তিন জন তবু বেঁচে আছি। কিন্তু ছেলেকে হারিয়ে সমরের বাবার কী অবস্থা! অনিল তো ছিল নির্ভেজাল ভাল মানুষ। কোন অপরাধে তাদের এত বড় শাস্তি পেতে হল?
লেখক: গণপ্রহারের ঘটনায় আহত