সামনে পুলিশ, হেলমেট কেনার ধুম কৃষ্ণনগরে

একে পেট্রোলে ‘না’, সঙ্গে দোসর পুলিশের রাঙা চোখ!আর এই দুইয়ের চাপে হেলমেট কেনার হিড়িক পড়েছে কৃষ্ণনগরে। যাঁদের মাথায় কস্মিনকালে কেউ কোনওদিন হেলমেট দেখেননি, সেই তাঁরাই ভিড় করছেন হেলমেটের দোকানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

এটা কত গো! কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র

একে পেট্রোলে ‘না’, সঙ্গে দোসর পুলিশের রাঙা চোখ!

Advertisement

আর এই দুইয়ের চাপে হেলমেট কেনার হিড়িক পড়েছে কৃষ্ণনগরে। যাঁদের মাথায় কস্মিনকালে কেউ কোনওদিন হেলমেট দেখেননি, সেই তাঁরাই ভিড় করছেন হেলমেটের দোকানে। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি মাথায় কৃষ্ণনগরের এক দোকানে হেলমেট কিনতে এসেছিলেন অনাদিনগরের বাসিন্দা শুভাশিস ভট্টাচার্য। পেশায় লরি চালক শুভাশিসবাবু বলছেন, ‘‘আর বলবেন না দাদা! বাইকে শুধু বাড়ি থেকে লরি মালিকের বাড়ি পর্যন্ত আসি। কিন্তু পুলিশ ও পাম্পের ভয়েই এখন হেলমেট কিনতে হচ্ছে।’’

শুভাশিসবাবু একা নন। তাঁর মতো অনেককেই ভিড় করে হেলমেট কিনতে দেখা যাচ্ছে কৃষ্ণনগরের হেলমেটের দোকানগুলিতে। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জের সুজিত ধর, ধুবুলিয়ার মায়াকোলের এনু ঘোষ এ দিন কৃষ্ণনগর থেকে হেলমেট কিনে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘গত কয়েকদিন থেকে পুলিশ মোটরবাইক ধরপাকড় বাড়িয়ে দিয়েছে। এ দিকে কলকাতার মতো শুনছি নদিয়াতেও হেলমেট না থাকলে পাম্প থেকে পেট্রোল দেবে না। তাই এ দিন হেলমেট কিনেই ফেললাম।’’

Advertisement

দিনকয়েক আগে পথ-নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতার নজরুল মঞ্চে পরিবহণ দফতরের কর্তা এবং কলকাতা পুলিশের অফিসারদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে হেলমেটহীন বাইক চালকদের নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।

শুক্রবার ওই বৈঠকের পরে কলকাতার পেট্রল পাম্পগুলির উদ্দেশে একটি নির্দেশিকা জারি করে কলকাতা পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে—‘নো হেলমেট, নো পেট্রল’। অর্থাৎ হেলমেট না থাকলে বাইক আরোহীকে বাস্তবিকই পেট্রল-ডিজেল বিক্রি করা যাবে না। নির্দেশ অমান্য করলে পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই সপ্তাহেই জেলার সমস্ত পেট্রোল পাম্পগুলিতে ওই একই নির্দেশ জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী।

হেলমেট বিক্রি যে বেড়েছে সে কথা কবুল করছেন হেলমেট বিক্রেতারাও। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল মোড়ে হেলমেট বিক্রেতা মিঠু সরকার, শিবু চক্রবর্তীদের কথায়, ‘‘আগে আমাদের দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ২-৩ টি হেলমেট বিক্রি হত। রাজ্য সরকার হেলমেট পরার বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখাতে গত দু’দিন থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০টি হেলমেট বিক্রি হচ্ছে।’’ কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড চত্বরের হেলমেট পাইকারি বিক্রেতা তরুণ দে বলছেন, ‘‘আগে গড়ে প্রতিদিন ১২০টি করে হেলমেট বিক্রি হত। দিন দুয়েক থেকে সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে।’’

নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘আমরা চাই জেলার সমস্ত বাইক চালক ও আরোহী হেলমেট পরুক। তবে এটা মনে রাখতে হবে হেলমেট শুধউ আইন বাঁচানোর জন্য নয়, নিজের জীবন বাঁচাতেও বড় ভূমিকা নেয়। সেই মতো আমাদের পরামর্শ যাঁরা হেলমেট কিনছেন তাঁরা আইএসআই মানের হেলমেট কিনুন।’’

হেলমেট বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই আইএসআই মার্কা হেলমেটই কিনছেন। তবে একটা অংশ আইন বাঁচাতে সস্তার হেলমেটও কিনছেন। এ দিন কৃষ্ণনগর নৃসিংহপুরের সূর্য বিশ্বাস এসেছিলেন হেলমেট সারাই করতে। সূর্যবাবু বলছেন, ‘‘কেনার পর থেকে বাড়িতেই পড়ে ছিল। শুধু ফিতেটা ছিঁড়ে গিয়েছে। এ বার নিয়মিত ব্যবহার করব। পুলিশ, পেট্রোলের কথা ছাড়ুন,
হেলমেট না পরলে এখন বাড়ির লোকজনও বকাবকি করছে। ফলে না পরে উপায় কী!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement