বিক্রি বন্ধ। বরজেই শুকিয়ে যাচ্ছে পান। করিমপুরে। — নিজস্ব চিত্র
নোটের ধাক্কায় ঝড়ছে পান। কারণ, খুচরোর অভাবে পান বিক্রি প্রায় বন্ধ। ফলে চাহিদা তলানিতে। ফলে করিমপুর এলাকায় বরজের মধ্যেই পান পাতা পেকে ঝড়ে যাচ্ছে। ব্যস্ত মরসুমে আচমকা পান বিক্রি বন্ধ হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে পান চাষিদের।
করিমপুরের পান চাষি বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানিয়েছেন, করিমপুর ১ ও ২ ব্লকে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। শুধুমাত্র করিমপুর ১ ব্লকে এই চাষ হয় প্রায় সাড়ে আটশো হেক্টর জমিতে।
পাটের পর এই এলাকার অর্থনীতি অনেকটাই পানের উপরে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই এখানকার পান বিহার, উত্তরপ্রদেশের লখনউ, কানপুর কিংবা দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়।
বড় নোট বাতিল ঘোষণার পর থেকেই পান বেচাকেনায় সমস্যা শুরু হয়েছে। তার জেরে গত এক সপ্তাহে পানের দাম পড়ে গিয়েছে অনেকটাই। এলাকার কোনও পান চাষির কিষাণ ক্রেডিট কার্ড নেই। ফলে কোনওরকম সরকারী সাহায্য বা ঋণ তাঁরা পাননা।
চাষিদের উৎপাদিত পান ও সব্জি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য সরকার বহু টাকা ব্যয়ে শিকারপুর এলাকায় একটি হিমঘর তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও চাষি সেখানে পান রাখতে শুরু করেননি। সেখানে পান রাখার ব্যবস্থা কেমনও তাও জানেন না তাঁরা।
এ দিকে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষিরা আর গাছ থেকে পান তুলছেন না। ফলে বরজেই পান শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। পচে নষ্ট হচ্ছে। মুরুটিয়ার পানচাষি সুবোধ বিশ্বাস, যমশেরপুরের গাজি মণ্ডলের জানালেন, সব মিলিয়ে এলাকার প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এই পান চাষের সঙ্গে যুক্ত।
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস অবধি পান বিক্রির মূল মরসুম। পানের
বিক্রি বন্ধ হওয়ায় নগদ টাকার অভাবে চাষিদের পাশাপাশি সমস্যায়
পড়েছেন ঝুড়ি ব্যবসায়ী বা পান বরজের শ্রমিকরা। পান বিক্রির টাকাতেই চলে তাঁদের সংসার। তা দিয়েই মেটে অন্যান্য প্রয়োজনও। ফলে পানচাষে চাষিরা প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করেন। শীতের সময় পান বিক্রি বেশি হয়। এই সময় নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছে এলাকার পান চাষ। চাষিরা জানাচ্ছেন, পনেরো দিন আগেও চাষিরা ৩৩০০ পান বিক্রি করেছেন দেড় থেকে দু’হাজার টাকায়। নোট বাতিলের ধাক্কায় তার দাম নেমে এসেছে, ৪০০-৫০০ টাকায়। পান ব্যবসায়ীরা খুচরো টাকার অভাবে ধার-বাকিতে কিছু পান কিনেছেন। বেশিরভাগ চাষিরা অবশ্য পান বিক্রি করতে পারেননি।
ফলে বরজের পান বরজেই ঝড়ছে। বিক্রি না হওয়ায় পান পেকে বা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে ক’দিন পর থেকে চাষিরা চরম সঙ্কটে পড়বেন।
করিমপুর-১ ব্লকের বিডিও সুরজিৎ ঘোষ জানান, পান চাষিরা সত্যিই খুব সংকটে রয়েছেন। প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখছে।