পড়ে রয়েছে নতুন হিমঘর। নোটের ধাক্কায় বিক্রি বন্ধ পানের। ফলে বরজেই ঝ়ড়ছে পান। কিন্তু, হিমঘরে পান রাখছেন না চাষিরা। ফলে চরম সঙ্কটের মুখে করিমপুরের পান চাষ।
হিমঘর চালু হওয়ার প্রায় ছ’মাস পরেও তা খাঁ খাঁ করছে। কোনও সব্জি বা পান নেই সেখানে রাখছেন না চাষিরা। চাষিরা জানিয়েছেন, হিমঘরে পান রাখার জন্য তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। সেখানে রাখা পান হিমঘর থেকে বের করলে তা কতদিন ভালো থাকবে সেই বিষয়ে প্রশাসনিক কর্তারা তাঁদের কোনও ধারণা দিতে পারেননি। চাষিদের অভিযোগ ঠিক কিনা সেই বিষয়ে কোনও সদুত্তম মেলেনি প্রশাসনের কাছ থেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রীয় কৃষি উদ্যোগ যোজনা প্রকল্পে এক কোটি তেত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করে মুরুটিয়া থানার কেচুয়াডাঙায় করিমপুর-১ ব্লক পান চাষি কল্যাণ সমিতির জমিতে এই হিমঘর তৈরি করা হয়েছে। জুলাই মাসে সেই হিমঘর চালু হয়।
প্রশাসন থেকে এলাকার বিভিন্ন পান চাষি ও সব্জি চাষিদের বলা সত্বেও কেউ সেখানে পান বা সব্জি রাখছেন না। পান পাতা বরজে শুকিয়ে কিংবা পচে গেলেও ওই হিমঘরে চাষিরা পান রাখছেন না।
কিন্তু কেন?
করিমপুর ব্লক উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানান, নবনির্মিত ওই হিমঘরের সুবিধা বা অসুবিধা সম্পর্কে চাষিরা অবগত নয়। প্রশাসনের কাছে হিমঘরের কিছু প্রযুক্তিগত বিষয়ে সঠিক জবাব পাওয়া যায়নি। ফলে, কেউ ওখানে পান রাখতে আগ্রহী নয়।
পান চাষিরা জানিয়েছেন, এক ঝুড়ি পানের মধ্যে নানা বয়সের পান থাকে। হিমঘরের তাপমাত্রা একটি বিশেষ পানের উপযোগী হলেও অন্যান্য পান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলেই চাষিদের মত। ওই হিমঘরের উষ্ণতা বা আপেক্ষিক আর্দ্রতা কত শতাংশ সে সম্পর্কে চাষিদের কোনও সুস্পষ্ট ধারনা নেই তাদের।
কতদিন পর্যন্ত পান ওই হিমঘরে রাখা যাবে, হিমঘর থেকে বাইরে বের করার পরেই বা পান কতদিন ভাল থাকবে তার কোনও জবাব চাষিরা পাননি। পানের রঙ ও গুণগত মান বজায় থাকবে কিনা, সেটাও পরিষ্কার নয়। আগে এ বিষয় গুলি সম্পর্কে তাঁদেরকে সচেতন করা প্রয়োজন বলেই মত কৃষি বিশেষজ্ঞদের।
হোগলবেড়িয়ার পান চাষি লক্ষ্মণ প্রামানিক বা মুরুটিয়ার নুরবক্স সেখ বলেন, ‘‘সকলেই এখানে প্রান্তিক চাষি। সামান্য জমিতে পান চাষ করেই দিন চলে। যদি সত্যিই ওখানে পান রাখলে উপকার হয়, তা হলে তা করব। কিন্তু পান রাখলে যে খারাপ হবে না সেই নিশ্টয়তাই তো পাচ্ছি না।’’
আরবপুর পান চাষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক কাঞ্চন সরকার জানান, চাষিদের উদ্দেশ্যেই তৈরি। অথচ, এই হিমঘর তৈরি কিংবা উদ্বোধনে এলাকার কোনও চাষিকেই জানানো হয়নি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে চাষিরা জানবে কী করে?’’
চাষিদের মত, প্রথমে চাষিদের কাছ থেকে সরকারী টাকায় কিছু পান কিনে ওই হিমঘরে রাখুক প্রশাসন। ১৫-২০ দিন পরে সেই পান বের করে পরীক্ষা করে দেখা হোক। যদি দেখা যায় পান ভাল থাকছে। হিমঘর থেকে বের করার পর যদি কয়েকদিন পান ভাল থাকে, তাহলে তাঁরা সেখানে পান রাখবেন।
করিমপুর-১ ব্লকের বিডিও সুরজিত ঘোষ কিন্তু বলছেন, “হিমঘরে পান রাখার সুবিধা সম্পর্কে আমরা পান চাষিদের বারবার বলেছি। তবুও তারা রাজি নয়।’’ তিনি জানান, হিমঘরের প্রযুক্তি ও উপকার বোঝানোর জন্য চাষিদের একটা প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। জেলা উদ্যান বিভাগের আধিকারিকদের সাথে কথা বলে খুব শীঘ্র সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে সরকার পান কিনে হিমঘরে সংরক্ষণ করে চাষিদের উপকারিতা বোঝাবে।
হিমঘরে প্রযুক্তিগত সমস্যা যে রয়েছে, তা মানছেন তেহট্ট মহকুমা উদ্যান আধিকারিক সুদীপ চন্দ্র। তিনি জানান, ওই হিমঘর চালু হওয়ার পর কিছু সব্জি রেখে পরীক্ষা করা হয়েছিল। ওখানে তাপমাত্রার কিছু প্রযুক্তিগত হেরফের রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্যা সারিয়ে ফেলা হবে।
নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় জানান, হিমঘরে পান রাখতে এলাকার চাষিদের কিছু সংশয় রয়েছে।
তাদের বোঝানোর জন্য খুব শীঘ্র প্রশাসন ও উদ্যান বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবে।